বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়েছে। এই চাপেরই ফল হিসেবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাধরদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিলাসবহুল সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৪ মে) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।
গভর্নর বলেন, “যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের ঘটনায় আমরা খুবই উৎসাহিত। এই উদ্যোগকে সামনে আরও বেগবান করতে হবে। আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাচারকৃত সম্পদ এখনও যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। আশা করছি, সেগুলোকেও চিহ্নিত করে জব্দ করা সম্ভব হবে।”
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ জাতীয় অপরাধ তদন্ত সংস্থা (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি—NCA) সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ১,৪৭৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে। এই সম্পদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি—সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে রয়েছে। এই সম্পদগুলোর মধ্যে লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অ্যাপার্টমেন্টসহ আরও বিলাসবহুল সম্পত্তি রয়েছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, সম্প্রতি তার লন্ডন সফরের সময় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থ পাচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, আমাদের চুরি হওয়া টাকা ফেরত আনতে হবে। এটা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও সেই বার্তাটি গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ানসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের অর্থ পাচার নিয়ে বড় বড় প্রতিবেদন করছে। ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন এনজিও-ও বিষয়টিতে সমর্থন দিচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি চাপ তৈরি হয়েছে, যার ফলস্বরূপই আমরা এখন সম্পদ জব্দের মতো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি।”
জব্দ হওয়া সম্পদ কবে দেশে ফিরতে পারে, এমন প্রশ্নে গভর্নর জানান, “এই জব্দ আদালতের বিচারের আগ পর্যন্ত ওই সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তরের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বিচার শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন—এই সম্পদ বাংলাদেশের, না যুক্তরাজ্যের। বিচার প্রক্রিয়া শুরু করাই এখন মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাজ্য ছাড়াও দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ আরও কিছু দেশে এ ধরনের সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমি সম্প্রতি দুবাই গিয়েছিলাম এবং শিগগিরই সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে আবার যাবো। আমরা আন্তর্জাতিক সম্মেলনেরও পরিকল্পনা করছি, যাতে অর্থ পাচারবিরোধী বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা যায়।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে গভর্নর বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—এই টাকা জনগণের। এটা রাখা অনৈতিক। জনগণের টাকা জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্যে স্পষ্ট, এই মুহূর্তে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।