এপ্রিল মাসে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বলছে, এই কমতির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের মূল্য হ্রাস। তবে একই সঙ্গে চালের সরবরাহ ঘাটতি এবং অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের ওঠানামা নিয়ে দিয়েছে সতর্ক সংকেত।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সাম্প্রতিক বৈঠকে উপস্থাপিত মে মাসের অর্থনৈতিক আউটলুকে জিইডি জানায়, চাল ও মাছের মতো প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম এপ্রিলেও মূল্যস্ফীতির বড় চালক ছিল। বিশেষ করে চালের দাম আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে—মার্চে যেখানে চালের প্রভাব ছিল ৩৪ শতাংশ, সেখানে এপ্রিল মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। এটি দেশের বাজারে চালের সরবরাহ ঘাটতির দিকেই ইঙ্গিত করে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, আলু, বেগুন ও শাকসবজির দাম কিছুটা কমায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কিছুটা হালকা হয়েছে। আলুর দাম কমে যাওয়ার প্রভাব ছিল -১৩.৬ শতাংশ। এপ্রিল মাসে সবজির দাম গড়ে কমেছে ১১.৪৫ শতাংশ, আর বেগুনের দাম শীর্ষে থাকার পর মার্চ থেকে কমে তৃতীয় স্থানে এসেছে (১১ শতাংশ)। সয়াবিন তেলের দাম যদিও এখনও খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে উল্লেখযোগ্য (৮.২ শতাংশ) প্রভাব ফেলছে, তবুও কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে বাজারে।
জিইডি জানায়, গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাবেও বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। গ্রামে এই হার ৪৪.৭ শতাংশ হলেও শহরে তা কমে ৩৬.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় যেকোনো ধরনের ধাক্কা মোকাবিলায় জিইডি সরকারকে কৌশলগতভাবে পর্যাপ্ত চালের মজুত বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এর পাশাপাশি চাল ও তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়েছে বলে জানানো হয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ ও আমানতের হার বেড়েছে, যা বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়। তবে সরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা বাড়ায় বেসরকারি খাতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে জিইডি।
জিইডির বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে, যার লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনা। এছাড়া, জলবায়ু-সংক্রান্ত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটায় মৌসুমি ফসল এবং শাকসবজির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়নি, যা বাজারে স্থিতি আনতে সহায়তা করেছে।
সবশেষে, জিইডি বলছে—যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে এবং সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।