স্টাফ রিপোর্টার :
দেশে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও চালের বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে চালের কেজিতে ৪ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এতে যেমন বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তা, তেমনি ঠকেছেন কৃষকরাও। বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট মহল এই পরিস্থিতির জন্য ‘করপোরেট মজুতদার সিন্ডিকেট’কে দায়ী করছেন।
চালের দাম বেড়েছে কেন?
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর বোরো মৌসুমে দেশে ২ কোটি ১৪ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৫ লাখ টন বেশি। এরপরও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৫-৮৫ টাকায়, মাঝারি (বিআর-২৮) ৫৮-৬৩ টাকা, এবং মোটা চাল ৫৫-৫৮ টাকা দরে। গত এক সপ্তাহেই এসব দামে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক মাসে সরু চালের দাম ৫ শতাংশ এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ শতাংশ।
চাল বেশি, দামও বেশি — এই অস্বাভাবিকতা কেন?
সরকারি খাদ্য গুদামে বর্তমানে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি। এর মধ্যে চাল ১৩ লাখ ৮২ হাজার টন ও ধান ২ লাখ ২৪ হাজার টন।
তবুও বাজারে হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও রংপুরের কৃষকরা বলেন, ধান বিক্রি করে তারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত বোধ করছেন। তাদের মতে, যখন ফসল তাদের হাতে থাকে, তখন বাজারে দাম থাকে নিচে। আর ফসল হাতছাড়া হলেই বাড়ে দাম।
সিন্ডিকেটের ইঙ্গিত
চালকল মালিকদের মতে, কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ঈদের আগেই কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করে রেখেছে। এখন তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির একাধিক নেতা দাবি করেছেন, দেশের ৮৫ শতাংশ চালকলের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই; সংকট তৈরি করছে বড় করপোরেট মিলগুলো।
চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর চাল মোকামগুলোতেও একই চিত্র। চট্টগ্রামে রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগাম কেনাকাটার কারণে ছোট মিল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না।
সরকারি উদ্যোগ কতটা কার্যকর?
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও খাদ্য বিভাগ অভিযান চালালেও তা খুচরা পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। পাইকারি মোকাম ও মিল পর্যায়ে নজরদারি দুর্বল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “কৃষকের হাতে ফসল থাকলে দাম কম, আর যখন কৃষক ফসল হাতছাড়া করে তখন বাড়ে দাম। এই চক্র কৃষক ও ভোক্তা উভয়েরই শত্রু।”
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, “ভরা মৌসুমেও চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে।”
কী করতে পারে সরকার?
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, দুর্নীতিই এখন সবচেয়ে বড় বাধা। মিডিয়ার সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্