দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি নেই। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদি এখনও সংকটাপন্ন, তার অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের রোববার সকালে বলেন, “ওসমান হাদি এখনও ডিপ কোমায় রয়েছেন। চিকিৎসকদের নির্ধারিত ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণকাল সোমবার রাতে শেষ হবে। এই সময়ে তার শারীরিক অগ্রগতি ও পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হবে। যদিও বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি, তবে কিছুটা ইন্টারনাল রেসপন্স আছে। যদি চিকিৎসকেরা অবস্থাকে স্থিতিশীল মনে করেন, পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।”
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা জরুরি অস্ত্রোপচার করেন। গুলি কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়েছে। পরে সন্ধ্যার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে হাদি ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। একই হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ উপস্থিত হয়ে হাদি ও খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন। সিলেট থেকে আসা সোহেল আহমেদ বলেন, “হাদি ভাইয়ের খবর নিতে এসেছি। একই হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়াও চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওসমান হাদি একজন প্রতিবাদী মানুষ। যারা দেশের ভালো চায় না, তারা তার ওপর হামলা করেছে। দেশের গণতন্ত্রের জন্য দুজনের জন্যই দোয়া করছি।”
ওসমান হাদি জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন। পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার পর হাদির সমর্থকেরা পতিত আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার এটিকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি পৃথকভাবে হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
পুলিশ সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের নাম উল্লেখ করেছে। হামলাকারী সম্পর্কিত তথ্য দিলে ৫০ লাখ টাকার পুরস্কারের ঘোষণা করেছে সরকার। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত করে এর মালিককে আটক করার তথ্যও দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

