যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ৫৩ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয় একটি পরিত্যক্ত ট্রাকের ভেতর দমবন্ধ হয়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনার দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত মানবপাচারের দায়ে দুই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি, প্রত্যেককে দুই লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার করে জরিমানাও করা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ফেলিপে ওর্ডুনা-তোরেস ও আর্মান্দো গনজালেস-গার্সিয়া। বিচারক অরল্যান্ডো গার্সিয়া তোরেসকে সরাসরি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং গনজালেস-গার্সিয়াকে ৮৩ বছরের সাজা দেন, যা কার্যত আজীবনেরই শামিল।
ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের জুন মাসে। একটি গরমে পরিত্যক্ত ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয় ৫৩ জন অভিবাসীর মৃতদেহ। আরও ১১ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই ট্রাকটিতে ৬৪ জন অভিবাসী ছিলেন, যারা মেক্সিকো, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা ও এল সালভাদর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
তদন্তে জানা যায়, প্রতিজন অভিবাসী ১২ থেকে ১৫ হাজার ডলার করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর আশায়। তাদেরকে প্রথমে লারেডো শহরে আনা হয়, পরে সান আন্তোনিও শহরের দিকে যাত্রা শুরু করে ট্রাকটি। কিন্তু ট্রাকটির এয়ার কন্ডিশনার ছিল নষ্ট, এবং পানিরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। টেক্সাসের প্রচণ্ড গরমে ট্রাকের ভেতরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। যাত্রীরা বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও কেউ তাদের শব্দ শুনতে পাননি। অনেকেই বাঁচার জন্য ট্রাকের দেয়ালে আঘাত করেও কোনো সাড়া পাননি।
প্রসিকিউশন পক্ষ জানায়, ওর্ডুনা-তোরেস ছিলেন একটি সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের নেতা। তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে মানুষ পাচার করতেন যুক্তরাষ্ট্রে। চক্রটি বিভিন্ন রুট, গাড়ি, নিরাপদ ঘর ও পরিবহন কৌশল ভাগ করে ব্যবহার করত, যাতে খরচ কমে ও নজরদারির ঝুঁকি হ্রাস পায়। এতে তাদের মুনাফাও বাড়তো।
এই মামলায় আরও পাঁচজন অভিযুক্ত ইতোমধ্যে দোষ স্বীকার করেছেন। তাদের শাস্তি পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজকের দিনে মানবপাচার একটি বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মেক্সিকোর সহিংস অপরাধচক্রগুলোর সঙ্গে এই কার্যক্রম এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবপাচারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে টেক্সাসের এই দুর্ঘটনা, যা শুধু অবৈধ অভিবাসনের নয়, বরং নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে।