সাইফুল ইসলাম, বাউফল প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফলে তেঁতুলিয়া ও কারখানা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে ১২টি গ্রামের ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সড়ক রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। রোববার (১৮ মে) উপজেলার নিমদী লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীর পাড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নেন নারী-পুরুষসহ শতাধিক এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রতিদিন নদীর পেটের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি। এ অবস্থা চলতে থাকলে গোটা এলাকা জনমানবশূন্য হয়ে পড়বে।
নিমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন,
“বিদ্যালয়টি তেঁতুলিয়া নদীর একেবারে কাছাকাছি। জোয়ার এলে আমরা প্রায়ই পানিতে ভেসে যাই। শিক্ষার্থীরা বই-খাতা ভিজিয়ে বাড়ি ফিরে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। এখন অভিভাবকরা নিরাপত্তার অভাবে শিশুদের অন্যত্র ভর্তি করছেন।”
পশ্চিম কাছিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনিল চন্দ্র জানান,
“কারখানা নদী একসময় বিদ্যালয় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ছিল। এখন সেটা ১০০ ফুট দূরে এসে গেছে। আর দেরি করলে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যাবে। বিগত কয়েক বছরে দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।”
কাছিপাড়া আব্দুর রশিদ মিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম কবির হোসেন বলেন,
“হাজিপুর গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। গোপালিয়া, বাহেরচর ও পশ্চিম কাছিপাড়ায় প্রতিদিন নতুন করে ভাঙন হচ্ছে। ১৫ কিলোমিটারজুড়ে নদী গিলে খাচ্ছে জনপদ। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে, কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।”
এদিকে নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী ও বড়ডালিমা এলাকা রক্ষার দাবিতে পৃথক মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ইউনিয়নবাসী।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব জানান,
“গত বছর কিছু এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা হয়েছে। চলতি বছরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দ্রুত নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণ ও স্থায়ী ভাঙনরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।