ঢাকার একটি আদালত সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের লন্ডনের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, তাদের নামে যুক্তরাজ্যের বারক্লেইস ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট এবং আরব আমিরাতের একটি কোম্পানির শেয়ার জব্দ করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন আজ সোমবার এই আদেশ দেন। আদালত দুদককে আদেশের কপি যুক্তরাজ্যের এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রির প্রধান নির্বাহী, বারক্লেইস ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং শারজাহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের করা আবেদনে বলা হয়, সালমান এফ রহমান এবং তার সহযোগীরা শেয়ার কারসাজি ও জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ বিলিয়ন টাকার ঋণ আত্মসাৎ এবং বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের তদন্তে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। আবেদনে বলা হয়, তারা এই অ্যাকাউন্টগুলোর অর্থ স্থানান্তরের চেষ্টা করছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একই আদালত সালমান এফ রহমান, তার পরিবার এবং সহযোগীদের ৩৫৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, গত বছরের ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দেশের সব ব্যাংককে সালমান, তার স্ত্রী ও ছেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়।
গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দুদক।
গত বছরের ২২ আগস্ট সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করে। এর আগে, ১৩ আগস্ট তাকে সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প উপদেষ্টা ছিলেন।
পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা:
আদালত সালমান এফ রহমান, তার স্ত্রী রুবাবা রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, বড় ভাই আহমেদ সোহেল ফাসিহুর রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে।
সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি, আত্মসাৎ এবং অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের তদন্তে তার সম্পদ পাচার এবং অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই মামলাটি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিযান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে, এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।