একজন মাদার অব ডেমোক্রেসি’র জীবনের গল্প
৩৬ বছর বয়সে ২ সন্তানকে নিয়ে বিধবা হন তিনি। স্বামী ভাঙা সুটকেস ছাড়া কিছুই রেখে যাননি এবং কোন ব্যাংক ব্যালেন্সও ছিল না। স্বৈরাচার এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর শহীদ মঈনুল রোডে একটি ১ তলা বাড়ি বরাদ্দ করেছিলেন নিরাপদে মাথা গোজার ঠাই পাবার জন্য। সেখানেই ২ সন্তানকে বড় করেছেন।
অল্প সময়ের মধ্যে বিধবা সাবেক গৃহবধূ যিনি রাজনীতির কিছুই জানতেন না, তাকে রাজপথে নামতে হয় ৯০ এর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার জন্যে। এরশাদের পতনে আপোষহীন নেত্রীর মর্যাদা পান তিনি, যেটা তিনি আজও ধরে রেখেছেন। তার শাসনামলে অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি? হয়েছে। আলবৎ হয়েছে। কিন্তু বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের মত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি, টাকা পাচারের মতো দুর্নীতি হয়নি।
তিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং এদেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন। তাকে ২০২২ সালে গণতন্ত্রের প্রতি অসামান্য অবদানের জন্য ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ এবং ‘ডেমোক্রেসি হিরো’ সম্মাননা দিয়েছে কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও)। আর সেই তিনিই হলেন বেগম খালেদা জিয়া।
বলতে সংকোচ নেই তার রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক ব্যার্থতা ছিল। কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের ভাষায়, ৭১ এর পর যতজন রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন, তিনিই একমাত্র সরকার প্রধান যে স্বৈরাচার হিসেবে অন্তত খেতাব পাননি। আমি বা আমরা তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রীও বলতে চাই না। দোষ গুন সবার থাকে, সাফল্য ব্যার্থতা সবারই থাকে।
২০০৭ থেকে ২০২৪ এই ১৭ বছরে তাকে নিয়ে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। তাকে নিয়ে নোংরা কথার ফুলঝুরি চালাতেন উৎখাতকৃত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা নিজে। ২ কোটি টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে কেন রাখা হয়েছে এ অভিযোগে টানা দেড় বছর কোর্টে কোর্টে হাজিরা দেবার পর তাকে বৃদ্ধ বয়সে জেল খানায় থাকতে হয়েছে ২ বছর! অথচ, সে সময়েই ১৫ মামলা ছিল হাসিনার বিরুদ্ধেও ।
শেখ হাসিনা তাকে মাইনাস করা, স্লো পয়জনিং করে মেরে ফেলার সব আয়োজন করেছিলেন। তার ছেলেদের বেড়ে ওঠার স্মৃতি মঈনুল রোডের বাড়িটি গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে গড়েছেন বহুতল ভবন। বেগম জিয়া এখন একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সেখানে গৃহবন্দী ছিলেন!
বেগম জিয়াকে স্রষ্টা বাচিয়ে রেখেছেন তার জীবদ্দশায় প্রাপ্ত সম্মান আর দেশের প্রতি তার ত্যাগের প্রতিদান দেবার জন্যে। ৩৬ বছর বয়সে স্বামীহারা খালেদা নিজের চোখে তার ছোট সন্তানকে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখেছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন যেখানে একমাত্র বড় ছেলের সাথে দেখা হবে দীর্ঘ ৭ বছর পর। এই যাত্রায় তার মুখে ছিল সুখের হাসি। ছিল লাখ লাখ নেতাকর্মির এবং সাধারণ মানুষের ভালবাসা। তার যাত্রা পথে নেতাকর্মি এবং সাধারণ মানুষের ঢল দেখেই বুঝা গিয়েছে।
পতিত লীগের অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন খালেদাকে মাইনাস করার অংশ হিসেবেই তিনি যে যাচ্ছেন হয়তো অর ফিরতে পারবেন না!
খালেদা জিয়া ফিরবেন। যাচ্ছেন যেমন স্বগৌরবে। ফিরবেনও স্বগৌরবে। এখনও বেগম জিয়াই সম্ভবত বাংলাদেশের রাজনীতির একমাত্র লিভিং ইউনিটি”র প্রতীক।