জুলাই আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন–পীড়ন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ শেখ হাসিনাসহ ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের কথা বলেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সহায়তার কথাও বলেছে। প্রশ্নটা তাই জোরালোভাবে উঠেছে, আওয়ামী লীগের দিন কি ফুরিয়ে যাচ্ছে?
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ হত্যাযজ্ঞ পরিচালনাকারী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দলটির নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হইয়েছে। এতে রাজনৈতিক দল হিসেবে সারা বিশ্বেই গ্রহণযোগ্যতা হারাবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ দিল্লি থেকে প্রচার করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের তৈরি এই প্রতিবেদন নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের ভেতরে নিজস্ব জনবল দিয়ে তদন্ত করলে আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কুতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ পেত। সরকার এই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
সরকার এই প্রতিবেদনকেই আদালতে উপস্থাপন করে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে পারে। এটা আওয়ামী লীগের নৃশংসতার আন্তর্জাতিক প্রমাণ।
প্রতিবেদনটি ঢাকায় প্রকাশ করা হয়নি এমনকি সরকারের কাছেও আগে হস্তান্তর করা হয়নি। ঢাকা থেকে সরকার প্রকাশ করলে এর গ্রহণযোগ্যতা কম হতে পারত। কিন্তু জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার ভলকার টুর্ক নিজে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ভারতও সংকটের মুখোমুখি হবে। জাতিসংঘের স্বীকৃত গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীকে আশ্রয় দিয়েছে এই কারনে মানবাধিকার সুচকে ভারতের রেটিং কমে যেতে পারে।
প্রবাসী শিখকে কানাডায় হত্যা করার অভিযোগে এমনিতেই ভারত বিপাকে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভারত ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে বিবাদে জড়ালে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এই প্রতিবেদনের কারণে শুধু আওয়ামী লীগই না, ভারতেরও বিপাকে পড়ার শঙ্কা আছে।
সব মিলিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই হতাশার সংবাদ। এর ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা কঠিন হবে। ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা শাস্তি এড়াতে পারবেন; কিন্তু বিচার এড়াতে পারবেন না। এখন বিচারপ্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে সহায়তা নিতে পারবে সরকার, যা বিচারকে তরান্বিত করতে সহায়তা করবে এবং গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের কারণে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।
এই মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বের হয়ে আসা সম্ভব না। এটা হয়তো আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বুঝতে পারছেন না। তাঁরা এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন, সম্ভবত শেখ হাসিনা আবারও ফিরে আসবেন! শেখ হাসিনাও ভারতে বসে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে নেতা–কর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।