ছাত্র আন্দোলন দমাতে ১০ কোটি টাকা অনুদান ও অস্ত্র যোগান দেয় ফজলে করিম
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ওপর দফায় দফায় হামলা অস্ত্র কোথায়? চট্টগ্রাম উত্তর জেলা রাউজান এর সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী ও তার ছেলে ফরাজ করিম চৌধুরী প্রকাশ বিকাশ করিমের অস্ত্রের ভান্ডার কোথায়?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভ যখন চরমে তখনই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় ১৬ই জুলাই ছাত্রলীগ -যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর। চট্টগ্রামের ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট এলাকায় অস্ত্রের প্রকাশ্য মহড়া দেখেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করলেও চট্টগ্রামে ব্যবহৃত বৈধ -অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
স্থগিত করা লাইসেন্সের অধীন থানায় জমা না হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী, সংস্থার বেহাত, হারানো অস্ত্রসহ সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে।
কারও কাছে অবৈধ অস্ত্রের তথ্য থাকলে অনুগ্রহ করে পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা ডিএমপি পুলিশ অবৈধ অস্ত্রমুক্ত করতে ‘হটলাইন ‘ চালু করলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরব ভূমিকায় রয়েছে।
সিএমপির সুত্র জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই বিকালে বহদ্দারহাট মোড়ে গুলিতে তানভীর ছিদ্দিকী নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তানভীরের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শহীদ ওয়াসিম আকরামের পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পাঁচ শিক্ষার্থীসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবকলীগ পরিচয়ধারী অস্ত্রধারী ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে ১৯ শে আগস্ট। ৩ রা আগস্ট অটোরিকশা চালক শহীদুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক হত্যার বিষয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এই চার হত্যা মামলায় অস্ত্রধারীদের অনেকের নাম বাদ পড়েছে।
যুবলীগের ফিরোজ, দেলোয়ার,আরশেদ বাচ্চু, নুরুল আজিম রনি, দেবু, মহিউদ্দিন ফরহাদ, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মনোয়ারুল আলম নোবেল, ওয়াসিম উদ্দিন, বাহাদুর,জালাল, সোহেল,মিঠু,জাফর জানে আলমসহ এমন অনেক অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ -যুবলীগ নেতার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও দেড় মাসে পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি কোন অস্ত্র।
আন্দোলন চলাকালীন ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর ও ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম নগরে পৃথক সহিংসতায় তাৎক্ষণিক পাঁচজন, পরে দুইজন সাতজন নিহত হন। এসব ঘটনায় আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে ৮০ ভাগই ছিলো গুলিবিদ্ধ।
গত মঙ্গলবার রাতে শেষ হয় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার সময়সীমা। এর মধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে লুট করা অস্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈধ অস্ত্রও। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) হিসেব অনুযায়ী, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগরের ৮টি থানা ও ৮ ফাঁড়িতে হামলা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বিভিন্ন ধরণের ৫০০ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২ হাজার গোলাবারুদ লুট হয়। যার মধ্যে অত্যাধুনিক নাইন এমএম তাওরাশ এবং সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোরোর পিস্তলও রয়েছে।
যৌথবাহিনীর অভিযান শুরুর ২২ দিন আগে গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের মধ্যে মাত্র ৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৭৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব সদস্যরা।
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, নগর ও জেলায় লাইসেন্স ছিল এমন ১২৪টি অস্ত্র জমা দেবার সময়সীমা শেষ হলেও এখনো জমা পড়েনি। নগরের ৮ থানা ও ৮ ফাঁড়ি থেকে লুট করা ৪৬৫টি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না পড়া ১২৪টিসহ মোট ৬২৪টি অস্ত্র ও ১২ হাজারের বেশি গোলাবারুদ মাঠে রয়ে গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, মুরাদপুর বহদ্দারহাট নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন স্পটে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ,তার বড় একটি অংশই বৈধ বলে জেনেছি। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বৈধ -অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করছি ছাত্রদের দমাতে ব্যবহার হওয়া অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হবে।
অনুসন্ধানের আরো জানা যায়, ৪ ঠা আগস্ট চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে ফেনী থেকেও। আর ১৬ জুলাই অস্ত্রের যোগান দেয়া হয়েছে নগরের নন্দনকানন ও রাউজান থেকে। ১৮ জুলাই উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাগুনিয়া- এই চার উপজেলার সন্ত্রাসীরাও যোগ দেন অস্ত্রহাতে। পুরো প্রক্রিয়ার সমন্বয় করেছেন রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী।
সুত্রমতে, ৪ ঠা আগস্ট চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশনা আসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের তরফ থেকে। চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আনা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। স্টেশন রোড়ের মোটেল সৈকত ( পর্যটন কর্পোরেশনের মালিকানাধীন) ও খুলশী এলাকায় অবস্থিত পুলিশের একটি গেস্ট হাউসে জড়ো করা হয়েছিলো এসব অস্ত্র। তার অধিকাংশ অস্ত্র ছিল ফজলে করিম চৌধুরী ও তার ছেলে ফরাজ করিম চৌধুরীর
ভাড়ায় আনা অস্ত্রের বিপরীতে অর্থের যোগান দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর সবুর লিটন, আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু এবং ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাবেক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এমন কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্রধারী যুবকদের বড় একটি অংশই নিরাপদে পাড়ি দিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। কেউ কেউ বর্তমানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবস্থান করছে বার্মা ও নেপালেও। গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ ছড়ানো হলেও এখনো যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর অবস্থান করছেন ভারতে। আর নিরাপদে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন আরশেদুল আলম বাচ্চু।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয়ে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ- যুবলীগের যথাকর্মীদের গ্রেফতার করে অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে জন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে আহত এবং খুন করেছেন বেশিরভাগ সাবেক এমপি রাউজানের ফজলে করিম তার ছেলে ফরাজ করিম চৌধুরী, যুবলীগের বাবর ও নূরুল আজম রনির ইশারায় ফজলে করিম চৌধুরী বর্তমানে জেলে থাকলেও বাকিরা ফজলে করিম চৌধুরীর হয়ে এখনো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।