মারুফ সরকার, প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ডাঃ কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলনকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগের পাহাড় জমছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান পদ দখল করেন এবং তারপর থেকে শিক্ষক, ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানজুড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন অনিয়ম, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচার ও দমনমূলক আচরণ
ডাঃ দোলন ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নানা বিতর্কিত কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আইনবহির্ভূতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন দিয়েছেন। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বদলি ও হয়রানি, সমালোচকদের চাকরিচ্যুতি, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে গভর্নিং বডিতে নিজের অনুগতদের বসানো, বিরোধীদের হেনস্থা ও সামাজিকভাবে হেয় করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক নেত্রী ডা. ফারজানা মাকসুদ রুনাসহ আরও কয়েকজন শিক্ষককে শুধুমাত্র মতামত প্রকাশের কারণে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করা হয়।
রাজনৈতিক পরিচয়ের দ্বিচারিতা
ডাঃ দোলনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ—তার দ্বৈত রাজনৈতিক অবস্থান। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার পাশাপাশি তিনি নিজেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘বিশ্বস্ত হাতিয়ার’ হিসেবেও তুলে ধরেন। এমনকি ৩০ এপ্রিল এক নির্বাচনে তার পক্ষে প্রচারে তারেক রহমানের নাম ও দুর্বলতা ব্যবহার করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার
ডাঃ দোলনের বিরুদ্ধে রয়েছে শিক্ষক নিযুক্তিতে অনিয়ম, সিন্ডিকেট তৈরি, প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা এবং কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ। তার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে কেউ কেউ কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক লাঞ্ছিত করার সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রদের পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি, মার্কশীট গায়েব করার ভয় দেখানো, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া—এসবের অভিযোগও রয়েছে। মহিলা শিক্ষকরা পর্যন্ত তার গালিগালাজ, অপমানজনক ভাষা ও আচরণ থেকে রেহাই পাননি।
লায়ন্স ক্লাব নির্বাচন ও ভুয়া বিজয় ঘোষণা
২০২৫ সালের ৯ মে লায়ন্স ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি৩-এর নির্বাচনে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ও পলাতক সাবেক গভর্নরের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে অংশ নেন ডাঃ দোলন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩টি ভোট পেয়ে পরাজিত হলেও নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ফেসবুকে প্রচার চালান, যা প্রতারণা ও তথ্য বিকৃতির শামিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভবিষ্যত ও আশঙ্কা
ডাঃ দোলনের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ জুন ২০২৫। এর আগেই তিনি বিভিন্ন মহলে ‘উন্নয়নের গল্প’ শুনিয়ে পুনর্নিয়োগ পেতে তৎপর। তবে সংশ্লিষ্ট মহল ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—এমন বিতর্কিত ও বিভাজনমূলক ব্যক্তিকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে পড়বে, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।