কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির নতুন নেতা ঘোষণার আগে একটি আবেগময় বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণে তিনি তার রাজনৈতিক যাত্রা, অর্জন এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করেন। ট্রুডো তার দল ও সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “এই যাত্রা আমার জন্য একটি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা ছিল। আমি গর্বিত যে আমরা একসাথে কানাডাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে পেরেছি।”
ট্রুডো তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জনের কথা স্মরণ করেন, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ, লিঙ্গ সমতা প্রচার, এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান। তিনি বলেন, “আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা কানাডিয়ানদের কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়েছি।”
নতুন নেতা নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রুডো লিবারেল পার্টির ঐক্য ও শক্তির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের দলের শক্তি তার বৈচিত্র্য এবং নতুন ধারণাগুলোকে আলিঙ্গন করার ক্ষমতায় নিহিত। আমি নিশ্চিত যে নতুন নেতা আমাদের দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং কানাডার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলবেন।”

ট্রুডো তার ভাষণের শেষ অংশে কানাডার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি কানাডিয়ানের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা আমাকে এই অসাধারণ সুযোগ দিয়েছেন। আমরা একসাথে অনেক কিছু অর্জন করেছি, এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের দেশের ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল।”
এই বিদায়ী ভাষণটি লিবারেল পার্টির নতুন নেতা ঘোষণার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ট্রুডোর এই আবেগময় ও অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনা ও দ্বন্দ্বের সম্পর্ক থাকলেও উভয় দেশই সবসময় সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্রেতিয়েন সম্প্রতি এক বক্তৃতায় এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু সবসময়ই আমরা তা সমাধানের উপায় খুঁজে পেয়েছি।”
ক্রেতিয়েন উল্লেখ করেন যে কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, “আমরা অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করেছি এবং সহযোগিতা করেছি, এবং আমি বলছি, ভবিষ্যতেও আমরা তা করব। আমরা ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু, কিন্তু আমরা একটি গর্বিত ও স্বাধীন দেশ।”
তিনি অতীতের বেশ কিছু কূটনৈতিক ঘটনার উল্লেখ করেন, যেখানে কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা সত্ত্বেও সফলভাবে সমাধান খুঁজে পেয়েছে। বিশেষ করে, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এই সিদ্ধান্তটি কানাডার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। যখন তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেন, তখন উপস্থিত জনতা জোরে করতালি দিয়ে তার সমর্থন জানায়।
ক্রেতিয়েনের এই বক্তব্য কানাডার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি দেশবাসীর গর্বকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। তিনি বলেন, “আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু, কিন্তু আমাদের নিজস্ব নীতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।”
এই বক্তব্যে ক্রেতিয়েন কানাডার ঐতিহাসিক সাফল্য ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা অতীতের সমস্যাগুলো সমাধান করেছি, এবং ভবিষ্যতেও তা করতে সক্ষম হব।”
কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক জটিল হলেও উভয় দেশই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ক্রেতিয়েনের এই বক্তব্য কানাডার স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়, যা দেশবাসীর মধ্যে গর্ব ও আশার সঞ্চার করে।
