ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানের পাল্টা আক্রমণ উত্তপ্ত করে তোলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এত বড় আঘাত-পাল্টা আঘাতের মাঝেও কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন হয়তো যুদ্ধবিরতির একটি সূক্ষ্ম সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদিও ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—তিন পক্ষই নিজেদের বিজয়ের গল্প বলছে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। ইরান প্রথম থেকেই সীমিত প্রতিক্রিয়ার পক্ষে ছিল। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির নির্দেশ ছিল—মারকাটারি নয়, মর্যাদা রক্ষার প্রতিক্রিয়া হতে হবে। তাই কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কারণ কাতার ইরানের মিত্র এবং সেখান থেকে বড় ক্ষতির আশঙ্কা কম।
অভিযানের আগে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরান জানিয়ে দেয় তাদের পরিকল্পনা, যাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত থাকতে পারে। ফলে ১৪টি মিসাইল ছোঁড়া হলেও ১৩টিই ভূপাতিত হয় এবং কোনো প্রাণহানি হয়নি। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইরানকে ধন্যবাদ জানান আগাম সতর্কবার্তার জন্য, আর বলেন—এই প্রতিক্রিয়া মেনে নেওয়া যায়। এরপরই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। ইসরায়েল এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না বললেও পরে জানায়, ইরানি হামলায় তাদের আরও চার সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরান নিজ দেশের অভ্যন্তরে এই হামলাকে “অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই” হিসেবে তুলে ধরে।
ইরানের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সফর করছেন তুরস্ক, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তানে। তিনি সরাসরি বলেন—যুদ্ধ ইরানকে গুঁড়িয়ে দিতে পারেনি, বরং তারা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অর্থনৈতিক চাপ তীব্র হচ্ছে। দোকানপাট, অফিস, ব্যবসা বন্ধ, সাধারণ মানুষ বিপাকে। এমনকি গার্ড বাহিনীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও বলছেন—এই যুদ্ধ আর টানার সামর্থ্য নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থেকেও কেউ কেউ বলছেন, আমাদের প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সমান নয়।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যে আসলেই কতটা ইউরেনিয়াম হারিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন হচ্ছে—এখন তারা গোপনে নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি নেবে, নাকি কূটনৈতিক আলোচনায় বসবে? যুদ্ধ এড়াতে সীমিত হামলার কৌশল সফল হলেও, শত্রুতা শেষ হয়নি। বরং পরিস্থিতি এখন এক কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে একটি ভুল সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলকে আবারও অগ্নিগর্ভ করে তুলতে পারে।