পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশ এশিয়া। এখানে আনুমানিক চারশত ছাপান্ন কোটি জনসংখ্যা। বিশ্ব জনসংখ্যার মতে, এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় চার গুণ বেড়ে গেছে।
সর্বশেষ স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ব তিমুর সহ উনপঞ্চাশটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নিয়েই এই মহাদেশ গঠিত। এই মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান আর মিয়ানমারের মতো দেশ রয়েছে। এবার আরও একটি নতুন দেশ পেতে যাচ্ছে এই দক্ষিণ এশিয়া। সেইসাথে নতুন প্রতিবেশী রাষ্ট্র পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার প্রশ্ন হচ্ছে এই অঞ্চলে নতুন দেশ কোথায় হচ্ছে?তা হলে এই অঞ্চলের অবস্থান ই বা কী হবে?
এশিয়া ও ইউরোপ একই ভূখণ্ডে অবস্থিত হওয়ায় একে ইউরেশিয়া বলা হয়ে থাকে। যদিও ইউরোপের সাথে এশিয়ার কোনও সীমারেখা নেই। সাংস্কৃতিকভাবে এশিয়া মহাদেশ বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র অন্য যে কোনো একটি মহাদেশের চেয়ে বেশি। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ভাষা, ধর্ম, বর্ণের বৈচিত্র্যতা, এশিয়া মহাদেশকে পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা করে থাকে।
আর এই মহাদেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ।১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত চিরসবুজ এই দেশটি। ভাটির এই দেশটির সাথে ভারতের ৪,১৫৬ কিলোমিটার লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।
বাকি এক দিকে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে।অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম নিকটতম প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার যা আগে বার্মা নামেও পরিচিত ছিল। দেশটির আয়তনের বিচারে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম দেশ জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি চল্লিশ লাখ।
গেল কয়েক বছর ধরে দেশটির অভ্যন্তরীণ জাতিগত দাঙ্গা গৃহযুদ্ধ, যা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে অস্থির করে তুলেছে। আর এবার সীমান্তে যোগ হয়েছে নতুন ইস্যু আরাকান আর্মি ।
১৭৮৫ সাল পর্যন্ত আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এই সালে বার্মিজ মান্দালয়ে রাজ্যের হাতে স্বাধীন আরাকান এর পতন ঘটে। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে বার্মিজ শাসকদের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার বিদ্রোহ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে যখন মিয়ানমারের স্বাধীনতা পায়।
সম্প্রতি মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে রীতিমত পরাজিত করে তারা রাখাইন অঞ্চল দখল করে নিচ্ছে। সবশেষ মংডু দখল করার মধ্য দিয়ে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিচ্ছে। সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইনে ৮০ শতাংশের বেশি অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাজ্যটির সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের আরও একটি টাউনশিপ বা শহর দখল করেছে দেশটির প্রভাবশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এটি দেশটির অন্যতম প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন থেকে ১৮৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে এবং ইরাবতী নদীর বদ্বীপের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
গোয়া আরাকান আর্মির দখল করা রাখাইন রাজ্যের ১৪ তম শহর। রাজ্যে এমন মোট ১৭ টি টাউনশিপ বা শহর রয়েছে।মাত্র আর তিনটি শহর দখল করা বাকি থাকল। ফলে পুরো রাখাইন রাজ্য দখল করার লক্ষ্যে এটা তাদের অন্যতম বড় পদক্ষেপ নয়।আর এতেই নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল রাখেন রাজ্য।
অর্থাৎ বাংলাদেশের পাশে নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় দশকের কম সময়ের মধ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইন আর্মি তৈরি করতে যাচ্ছে নতুন দেশ।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোনও সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারে রাখাইন আর্মি। কক্সবাজার সীমান্তের ওপারে যে কোনও মুহূর্তে ঘোষণা আসতে পারে নতুন একটি রাষ্ট্রের।
দেশীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, খুব শিগগিরই দক্ষিণ এশিয়ার নতুন দেশ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। যা হচ্ছে রাখাইন রাজ্যকে ঘিরে।প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও আরাকান আর্মি কক্সবাজার সীমান্তের ওপারে যে কোনও মুহূর্তে হতে পারে নতুন একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা।
জানা গেছে, রাখাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে ভার, চীন, আমেরিকার মতো দেশগুলো। এতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ায় ।গত দেড় দশক আগে ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় এ এল ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান। ইউএলএ এর সামরিক শাখা আরাকান আর্মির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে।