বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীসমাজের অবদান অপরিসীম ছিল। তবে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বা গণ-অভ্যুত্থান সফল হলেও, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনো থামেনি। নারীরা এখনও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমতা ও ন্যায্যতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বাধা এখনও বিদ্যমান। নারীকে ভুক্তভোগী বা অবহেলিত হিসেবে দেখা হয়, তাদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, এবং বৈষম্য সমাজে দৃশ্যমান। তবে, নারীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা আন্দোলন গড়ে তুলছে এবং লড়াই করছে।
অথচ, সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীদের অগ্রগতি না ঘটলে, প্রকৃত সমতা ও স্বাধীনতা আসবে না। নারীদের প্রতিদিনের সংগ্রাম, তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক মর্যাদার জন্য কঠোর পরিশ্রম এখনো অব্যাহত।
তবে, নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং এই সংগ্রামে সাফল্য অর্জনের জন্য পুরুষদেরও সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। নারীর উন্নতির জন্য সমাজে আরও বৃহত্তর পরিবর্তন প্রয়োজন, যা একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে সাহায্য করবে।
নারীদের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং তাদের সংগ্রাম আজও সমাজে শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আজকের দিনে আরও প্রসারিত হয়ে উঠছে, এবং এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জন করবে।
১৪ জুলাই, ২০২৫ – তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একটি জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাজাকারের তকমা দেন, যা নারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
নারীরা এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা বলেন, “একটি জাতির ইতিহাসকে এভাবে অপমান করা চলবে না।”
এটি উল্লেখযোগ্য যে, ১৪ জুলাই দিনটিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন, যার মধ্যে নারী নেত্রীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তারা বলছেন, নারীদের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রক্ষায় তাদের সংগ্রাম এখনও চলমান।
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাও এই বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করেছেন।
নারীকে অবহেলা নয়; অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত
বাংলাদেশে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চলছে। তবে, এখনও সমাজের অনেক স্তরে নারীরা যথাযথ মর্যাদা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নারীদের প্রতি অবহেলা, বৈষম্য এবং সহিংসতা আজও এক বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, নারীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। একমাত্র সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহমত নিশ্চিত করেই আমরা একটি সমতাভিত্তিক এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব। নারীদের ক্ষমতায়ন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই সমানভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের জন্য সমাজের প্রতিটি অংশের অংশগ্রহণ এবং সমর্থন প্রয়োজন। শুধুমাত্র আইনি পরিবর্তন বা সরকারের উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর সম্মান এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে একত্রিত হতে হবে।
নারীদের উন্নতির জন্য আরও বৃহত্তর কাজ করা, তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবায় সমতা নিশ্চিত করা একমাত্র নারীর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। নারী ও পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন করতে পারব।
Anwar Murad (London)