‘চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শুধু ক্ষমতা নয়, আওয়ামী লীগ জনগণের বিশ্বাস থেকেও বিতাড়িত হয়েছে’—এমন মন্তব্য করেছেন সদ্য প্রয়াত বুদ্ধিজীবী, লেখক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এ কথা জানান। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, উমর ছিলেন মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে না পারলেও আইন অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া তার সাক্ষ্য আদালতে গৃহীত হতে পারে।
জবানবন্দিতে বদরুদ্দীন উমর উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল ব্যতিক্রমী ও রূপান্তরমূলক। ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের তুলনায় এটি ছিল সবচেয়ে বিস্ফোরক। তার ভাষায়—“এবারের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভা, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় দলীয় পতন আর ঘটেনি।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পরদিন থেকেই সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেখ মুজিবের মূর্তি ও মুরাল ভাঙা শুরু হয়। এটি জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ। উমরের মতে, এই অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগের জন্য মুসলিম লীগের মতোই একটি রাজনৈতিক পরিণতি ডেকে এনেছে। তিনি মনে করেন, ভারতের সহযোগিতায় দলটি কিছু গোপন কর্মকাণ্ড চালালেও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের পুনরুত্থান অসম্ভব।
ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকাও তার জবানবন্দিতে বিশেষভাবে উঠে আসে। তিনি বলেন, ইতিহাসে ছাত্ররা সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, তবে এবারের আন্দোলনে তাদের শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগ ও সাহস ছিল নজিরবিহীন।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যু
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বদরুদ্দীন উমর (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্ম নেওয়া উমরের বাবা আবুল হাশিম ছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক। ষাটের দশকে তার লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) ও ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯) বইগুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনা গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন, কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন। একসময় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এবং আমৃত্যু এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।