চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাত জন নিহত

চট্রগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাস ও সিএনজি টেক্সির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পরিবারের ৭ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হাটহাজারী–নাজিরহাট সড়কের মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত সিএনজি চালকসহ দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর বাস চালক পালিয়ে যান। পুলিশ বাস ও দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া টেক্সিটি জব্দ করেছে।

নিহতরা হলেন চন্দনাইশের জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ধোপাপাড়া এলাকার মৃত ভোলা দাশের ছেলে প্রবাসী নারায়ণ দাশের স্ত্রী রীতা রানী দাশ (৩৮), তার বাক্‌ প্রতিবন্ধী মেয়ে কাঞ্চনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী শ্রাবন্তী দাশ (১৭), বর্ষা দাশ (৯), যমজ দুই সন্তান দ্বীপ দাশ (৪), দিগন্ত দাশ (৪), নারায়ণের বড় ভাই প্রতিবন্ধী শম্ভুর ছেলে বিপ্লব দাশ (৩০) এবং নারায়ণের বোন উপজেলার সাতবাড়িয়া থেকে আসা মৃত সচীন্দ্র দাশের স্ত্রী চিনু দাশ (৫৫)। নিহত চিনুর ছেলে বাপ্পা দাশ (৩২) চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহতদের সবার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলায়। অর্থাৎ টেক্সিতে থাকা এক পরিবারের শিশুসহ ৮ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ৭ জন। আর টেক্সি চালক বিপ্লব মজুমদারের (২৮) বাড়ি ফটিকছড়ির বৈদ্যারহাটে।

স্থানীয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত ও আহতরা সিএনজি টেক্সিতে (চট্টগ্রাম–থ–১৩–০২১৮) করে ফটিকছড়িতে আত্মীয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।

নিহত রীতা রানীর বড় জা মল্লিকা দাশ জানান, ফটিকছড়ি উপজেলায় তার ছোট জা রীতার নানাবাড়ি। এক মাস আগে রীতার নানি মারা যান। গতকাল ছিল তার নানির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রীতার সাথে পরিবারের অন্যরা ফটিকছড়ির শাহনগর গ্রামে মনোমোহন কবিরাজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সকাল ৯টায় চন্দনাইশের বাড়ি থেকে বের হয়ে টেক্সিতে করে মইজ্যারটেক যান। সেখান থেকে অপর একটি টেক্সিতে আসেন নগরীর নতুন পাড়ায়। সেখান থেকে টেক্সিতে ফটিকছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। টেক্সিটি হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রাম শহরমুখী যাত্রীবাহী বাসের (চট্টমেট্রো–ব–১১–১৮০৮) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাইস্থলেই প্রাণ হারান ৭ জন।

উপস্থিত লোকজন আহত বাপ্পা ও সিএনজি চালক বিপ্লবকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। দুর্ঘটনার কারণে সড়কে তিন কিলোমিটার যানজট হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত বাপ্পা দাশের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা চন্দনাইশ থেকে এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ফটিকছড়ির শাহনগর যাচ্ছিলাম। পথে উক্ত স্থানে চট্টগ্রামগামী বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পাই।

উল্লেখ্য, ১২–১৩ বছর আগে ওই সড়কের মুন্সির মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১৫ জন নিহত হয়েছিলেন। এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে স্থানীয় অনেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নগরীর অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত সড়ক চার লেইনের। সড়কের মাঝখানে ডিভাইডার আছে। হাটহাজারী থেকে ফটিকছড়ি পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু ডিভাইডার না থাকায় সড়কে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এতে করে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এই সড়কে ডিভাইডারের দাবি জানান তারা।

খবর পেয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোয়েব আহম্মদ খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মসিউজ্জামান, ওসি মো. মনিরুজ্জামান, হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. আদিল মাহমুদ ও ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান ঘটনাস্থলে যান।

হাইওয়ে পুলিশের ওসি আদিল মাহমুদ জানান, ময়না তদন্ত ছাড়া নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে স্বজনদের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

চন্দনাইশের মোহাম্মদপুরের ধোপাপাড়ায় যখন নিহতদের মরদেহ নেওয়া হয়, তখন অনেক মানুষ তাদের দেখতে আসেন। এ সময় সবার চোখে ছিল অশ্রু।

জোয়ারা ইউনিয়রের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরী রোকন বলেন, স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই। আমরা নিহতদের শেষকৃত্য করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

এদিকে গত রাতে নিহতদের পরিবারে গিয়ে খোঁজ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় সাথে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম। এমপি নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * সড়ক দুর্ঘটনা * সাত জন নিহত