গাজীপুর সিটির পরাজয় নিয়ে শিঘ্রই আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডে বৈঠক
সদরুল আইনঃ
গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের পর এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। খুব শীগ্রই এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেবেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, গাজীপুর নির্বাচনের পোস্টমর্টেম করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এই পোস্টমর্টেমে গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পাঁচটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
১। সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ের অভাবঃ
২০১৮ নির্বাচনে গাজীপুরের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন। উত্তরায় অফিস করে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা ভোটের দিন পর্যন্ত নিয়মিত মনিটরিং করতেন এবং খোঁজখবর নিতেন।
কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে গাজীপুর নির্বাচনের ব্যাপারে উৎসাহী দেখা যায়নি। তারা গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাননি।
শুধুমাত্র মির্জা আজম এবং এসএম কামাল হোসেনকে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বাহাউদ্দিন নাসিমও গাজীপুর নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছেন। তবে এর বাইরে অনেক সিনিয়র নেতাকে গাজীপুরের ব্যাপারে নির্লিপ্ত দেখা গেছে। কেন তারা নির্লিপ্ত ছিলেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২। ভুল কৌশলঃ
আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করছেন গাজীপুরে নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কৌশল ভুল ছিল।
বিশেষ করে জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা, তাকে দুদকে তলব করা ইত্যদি বিষয়গুলো সঠিক হয়নি এবং এই ব্যপারে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল বলে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা মনে করেন।
৩। গাজীপুরে ৩ স্থানীয় নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতাঃ
গাজীপুরের ওয়ার্ড পর্যায়ের একটি বড় অংশের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন।
তারা মুখে আজমত উল্লা’র কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন, নৌকার ব্যাচ পরেছেন, কিন্তু ভোট দিয়েছেন জাহাঙ্গীরের মা’কে। এরকম বেশকিছু স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, কর্মীরা যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা যদি বিশ্বাস রক্ষা না করে, তাহলে নির্বাচনে জেতা কঠিন হয়ে পড়ে।
৪। আজমত উল্লা’র কারিশমার অভাবঃ
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লা কারিশমা দেখাতে পারেননি। তিনি একজন ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা। দলের জন্য তারা অবদান অনস্বীকার্য।
কিন্তু জনগণের কাছে, বিশেষ করে নতুন ভোটারদের কাছে তিনি কোন রকম কারিশমা নিয়ে উপস্থিত হতে পারেননি। যে কারণে এই নির্বাচনে সাধারণ জনগণ তার ব্যাপারে উৎসাহী হননি।
৫। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর নির্ভরতাঃ
গাজীপুর নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল ছিল। এটি সঠিক ছিলনা বলেই মনে করেন অনেকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন কিংবা পুলিশ কেউ জেতাবে না সেটি মাথায় রেখেই আগামী নির্বাচনগুলোতে কাজ করতে হবে।
এছাড়াও আরও কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি আওয়ামী লীগ খুঁজে পেয়েছে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় পরিক্ষাকেন্দ্র ছিল।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, তাদের সাফল্য হল যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।