সউদ আব্দুল্লাহ,কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ১৭ বছরের দীর্ঘ বিরতির অবসান ঘটিয়ে আবারও প্রাণ ফিরে পেল জয়পুরহাট জেলার কালাই পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট। প্রায় দুই দশক ধরে বন্ধ থাকা এই হাট নতুন রূপে, নতুন উদ্যোগে এবং নতুন আশা নিয়ে গত ২৫ জুন, বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শামিমা আক্তার জাহান। উদ্বোধনী আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন কালাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেখার রহমান, কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদ হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার অরুন চন্দ্র রায়,পৌর বিএনপির আহবায়ক সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার সোহেল, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলিম, হাট ইজারাদার নজরুল ইসলামসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। এসময় হাটে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা উপহারস্বরূপ গামছা ও ছাতা বিতরণ করা হয়।
হাটের প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করা যায় ব্যাপক সাড়া। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাটের পুরনো অংশে গরু, ছাগল নিয়ে ভিড় করেন স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন বিক্রেতা তাঁদের পশু নিয়ে হাটে অংশ নেন। প্রথম দিনেই বিক্রি হয় ৬টি গরু ও ৬টি ছাগল, যা হাটটির প্রতি মানুষের আগ্রহের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় এই পশুর হাট ছিল কালাই অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকেই বিভিন্ন গ্রামে পশু সরবরাহ হতো। তবে নানা প্রশাসনিক জটিলতা ও অনিয়মের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছিল একটি ঐতিহ্যবাহী জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম।হাটটি পুনরায় চালু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন স্থানীয় খামারি, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
হাটে আগ্রহ বাড়াতে এবং ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে প্রথম চার-পাঁচটি হাটে টোল ফি কম রাখা হয়েছে। গরুর জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা এবং ছাগলের জন্য ১৫০ টাকা, যা পাশের অন্যান্য হাটের তুলনায় অনেকটাই কম।
হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মহিবুল ইসলাম জানান, কালাই পৌরসভা, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া এ উদ্যোগ সফল হতো না। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, এই হাট কেবল পশুর বেচাকেনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতে এখানে চালু করা হবে আলু, ধান, সাইকেল-ভ্যানসহ কৃষিপণ্যভিত্তিক অন্যান্য সাপ্তাহিক হাট, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।
স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক আব্দুল হালিম আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই হাট আমাদের সংস্কৃতির অংশ ছিল। এটি আবার চালু হওয়ায় মনে হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া অতীতের একটি টুকরো ফিরে এসেছে। পুরনো দিনের স্মৃতি যেন আবার নতুন করে জেগে উঠেছে।
পৌর প্রশাসক শামিমা আক্তার জাহান বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল হাটটি পুনরায় চালু করার। সেই দাবি বিবেচনায় নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে হাট পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে এই হাট শুধু পশু কেনাবেচার জায়গা নয় বরং কৃষিপণ্য, সরঞ্জাম ও পরিবহনসামগ্রীর একটি বিস্তৃত বাজারে পরিণত হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।