রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরে পুলিশের ধাওয়ায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদি দোকানদার ছমেছ উদ্দিনের মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটনের ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মাহমুদুল হক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় তিনি ৫৪ নম্বর আসামি।
ঘটনার পেছনের গল্প
২০২৪ সালের ২ আগস্ট রংপুর নগরীর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে আতঙ্কে দৌড়ে পালানোর সময় ছমেছ উদ্দিন (৬৫) রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
তবে ১০ মাস পর ২০২৫ সালের ৩ জুন ছমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম হাজিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ছমেছ উদ্দিনের দোকানে গিয়ে তাকে হুমকি ও মারধর করেন, এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং পরে মারা যান।
প্রশ্নের মুখে মামলা
ছমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম ও ছেলে আশিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা পুলিশের চাপে কাগজে সই দিয়েছেন। মামলায় কারা আসামি হয়েছেন, সে সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
ছমেছ উদ্দিনের জানাজা পড়ানো মসজিদের ইমাম মমিনুল ইসলাম বলেন, মরদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে শুনেছেন।
এছাড়া স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির হাজি নাছির উদ্দিনও বলেছেন, পুলিশ এসেছিল তাকে (নাছির উদ্দিন) ধরতে, ছমেছ উদ্দিনকে নয়। ছমেছ উদ্দিন আতঙ্কে দৌড়ালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
শিক্ষক গ্রেফতারে প্রতিবাদ
গ্রেফতার হওয়া অধ্যাপক মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন ফেসবুকে লিখেছেন, “এটি একটি সাজানো মিথ্যা মামলা। আমার স্বামী নির্দোষ। তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত একজন মানুষকে এভাবে হয়রানি করা দুঃখজনক।”
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, “একজন মানুষের হার্ট অ্যাটাককে হত্যা বানিয়ে মামলা করে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক হয়রানির স্পষ্ট উদাহরণ।”
২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন অভিযোগ করেন, “ওসি নিজেই মামলাটি রেকর্ড করে তদন্তকারী কর্মকর্তা হয়েছেন। এটি পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি।”
পুলিশের নীরবতা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “উপরমহলের সঙ্গে কথা বলুন।”
উপসংহার
ময়নাতদন্ত ছাড়াই দায়ের হওয়া এ হত্যা মামলা নিয়ে রংপুরজুড়ে প্রশ্নের মুখে পুলিশ। স্থানীয়রা বলছেন, একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘রাজনৈতিক হত্যা’ বানিয়ে মামলা দায়ের, এবং নিরীহ শিক্ষকের গ্রেফতার—সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটি গভীর তদন্ত দাবি করে।