মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা):
“পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রইল না… গয়না নেই, গরু নেই, টাকা নেই, ঘরও নেই—সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে”—কাঁপা কণ্ঠে আর চোখের অশ্রু ঝরিয়ে এমনই বুকফাটা হাহাকার করছিলেন আনোয়ারা বেগম। তিনি শুধু একজন নারী নন, যেন পুরো একটি পরিবার, একটি নিঃস্ব জীবনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মনোহরপুর উত্তরপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আবু তাহেরের বসতঘর ও সংলগ্ন আরেকটি ঘর। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা আপ্রাণ চেষ্টা করেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু দুই ঘণ্টা পর আগুন নিভলেও তখন আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।
ঘরে থাকা দুইটি গরু বিক্রির নগদ অর্থ, ঈদের বাজারের প্রস্তুত কাপড়, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র—সবই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“ঈদের আগেই গরু দুইটা বিক্রি করছি, সেই টাকা ঘরে ছিল। ভেবেছিলাম ঈদের পর আবার গরু কিনবো। কিন্তু সব কিছুই শেষ হয়ে গেল। এখন কীভাবে বাঁচব?”
প্রশাসনের সহায়তা:
খবর পেয়ে বিকেলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান। তিনি সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার সহায়তা দেন। তিনি বলেন,
“আমি শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা না, একজন মানুষ হিসেবেও এই পরিবারের পাশে আছি। ঘর পুনর্নির্মাণে ঢেউটিনসহ অন্যান্য সহায়তা খুব দ্রুতই প্রদান করা হবে।”
মানবিক আহ্বান:
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এ পরিবার এখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব। প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও হৃদয়বান মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে—এই দুঃসময়ে যেন সকলে এগিয়ে আসে।
একটি পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখন প্রয়োজন আমাদের সহানুভূতি ও সহায়তা। মানবিকতার এই পরীক্ষায় পাশে থাকাই সবচেয়ে বড় কাজ।