যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে যে শীতলতা তৈরি হয়েছে, তা এখন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একসময় ‘হাউডি মোদী’ ও ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা এখন অনেকটাই অতীত। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই সম্পর্কের রসায়নে ভাটার টান স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভরসার ঘাটতি এবং দিল্লির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দুই দেশের মিত্রতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
সম্প্রতি এই টানাপড়েনের কারণ প্রকাশ্যে এনেছেন মার্কিন কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লাটনিক। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারিত্ব ফোরামের সভায় তিনি বলেন, ভারতের রাশিয়ার ওপর ক্রমবর্ধমান সামরিক নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। তার ভাষায়, ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশ রাশিয়া থেকে আসে, যা মার্কিন স্বার্থ ও বন্ধুত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, দিল্লি যদি সত্যিকারের কৌশলগত মিত্র হতে চায়, তবে তাকে রুশ প্রভাব থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ফিরে তাকাতে হবে।
এছাড়া ভারতের ব্রিকস জোটে সক্রিয় ভূমিকা এবং ডলারের আধিপত্য হ্রাসের প্রচেষ্টাও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাটনিক বলেন, “ব্রিকস চাইছে ডলারের আধিপত্য ভাঙতে। আর ভারত সেই প্রচেষ্টায় সায় দিচ্ছে। এতে আমাদের জন্য আস্থা রাখা কঠিন।” ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, এই অবস্থান কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগতভাবেও যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলছে।
তবে লাটনিক জানান, আশার আলো এখনও নিভে যায়নি। তার মতে, যদি উভয় দেশ খোলামেলা ও সৎ আলোচনায় বসে, তাহলে সম্পর্কের গতিধারা বদলানো সম্ভব। তিনি বাণিজ্য খাতে নতুন সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন, যা দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আবারও উষ্ণ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, ভারতও নিজের অবস্থান থেকে একচুল সরছে না। জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে দিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে। এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা, তার সফল মোতায়েন, এবং ভবিষ্যতে আরও ইউনিট কেনার পরিকল্পনা এই নীতিরই প্রতিফলন। এমনকি ভারত চায়, ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রকে আধুনিকীকরণেও রাশিয়ার কারিগরি সহায়তা থাকুক। এসব পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সামরিক খাতে রাশিয়া এখনো ভারতের জন্য অবিচ্ছেদ্য অংশীদার।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন এক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ, ভূরাজনৈতিক চাহিদা এবং বৈশ্বিক ভারসাম্যের প্রশ্নে দুই দেশের নীতিগত পার্থক্য যদি সমাধান না হয়, তবে সম্পর্কের এই দূরত্ব আরও গভীরতর হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সময় ও কৌশলগত সংলাপ এই জট খুলতে পারে কিনা।