কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি: এস এম মাসুদ
কাপাসিয়ার রানীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় সঙ্গম স্থলে বিন্দু বিন্দু বালি ও পলি জমে জেগে উঠা মনোলোভা এক ভূখন্ড ‘ধাঁধার চর’। অনেকের কাছে মাইঝ্যার চর বা মাঝের চর নামেও বেশ পরিচিত। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় আড়াই শ’ বছর আগে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া ও নরসিংদী জেলার সীমানাবেষ্টিত শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্রের তারাগঞ্জ, রানীগঞ্জ, লাখপুর, চরসিন্দুর এলাকায় নদীর মাঝ খানে এ চর জেগে উঠে। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সবুজে ঘেরা ধাঁধার চরের দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার। বর্ষাকালে নদীর বিশাল ঢেউ দেখলে মনে হয়, এ যেন কোন এক সমুদ্র সৈকত। দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হবে এ যেনো ভেসে উঠা দৈত্যকার কোনো জাহাজ।
দেখতে বেশ চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর এ ‘ধাঁধাঁর চর। বর্ষাকালে এর ঢেউ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী পর্যটকরা। এখানে পেয়ারা, বড়ই, কলা, জাম, জলপাইসহ রকমারি ফল যেন আগ বাড়িয়ে ইশারা করে। এ চরে আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন বৃক্ষের সবুজ ছায়া, পাখির কিচিরমিচির ডাক, ফসলের মাঠ, নদীর হিমেল হাওয়া যেন ক্লান্তিনাশের এক মহৌষধাগার এ ধাঁধার চর। এ ধাঁধার চরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সময়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে মন্ত্রনালয়ে ফাইল চালাচালি করে আদৌ এর কোন সুফল পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞ মহলের ধারণা, ধাঁধার চরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে সরকার এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে যা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এখানে শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র মিলিত হওয়ার কারণে বিন্দু বিন্দু বালি ও পলি জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মনোলোভা ধাঁধার চর। দেখতে অনেকটা নদীর তলদেশ থেকে জেগে উঠা টাইটানিক আকৃতির মতো লাগে।শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগে উঠা নদীর অববাহিকার ঐতিহাসিক এক নিদর্শন ‘ধাঁধাঁর চর’, একডালা দুর্গ রানীগঞ্জ, লাখপুর, চরসিন্দুর এলাকার ঠিক মাঝখান দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা প্রবাহিত হয়েছে।২০০৬ সালের সার্ক সম্মেলনের সময় “ধাঁধার চর” গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব উঠে। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
বর্তমানে চর থেকে অনেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় চর থেকে বড় বড় গাছপালা কেটে ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে মনোলোভা নিদর্শন ও পরিবেশ বিনষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এতে এমন সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি করা অতি জরুরি। তা না হলে আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাবে একটি সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পর্যটককেন্দ্র। অতি সম্প্রতি এখানকার স্থানীয় চাষীরা খাজনা জমা নেওয়ার দাবি তুলেছেন এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। ধাঁধার চরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম বলেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।