ঢাকা, বাংলাদেশ – গত বছরের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ (১৩ মার্চ) বৃহস্পতিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। হামলাকারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হবে, বলে কমিটি জানিয়েছে।
কাজী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না, তবে কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।”
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে, সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
তথ্য অনুসন্ধানে সহিংসতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় আহতদের ওপর হামলা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা।
এই তদন্তের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ক্যাম্পাস পোর্টাল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কাজী মাহফুজুল ইসলাম জানান, “নিরপরাধ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না আসে তা নিশ্চিত করতে আমরা ভিডিও প্রমাণ যাচাই করার সময় ডিজিটাল ফ্যাক্ট চেকিং টুল ব্যবহার করেছি।”
কমিটি জানিয়েছে, হামলার সবচেয়ে খারাপ বিষয় ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং তাদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধা দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি, কারণ হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে, কিছু নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলেও, সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যদিও এই ঘটনার নথিপত্র প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই নয়, পুরো দেশের ইতিহাসের জঘন্য ঘটনা।”
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।