ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার করতে যেসব নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার অন্যতম হলো ‘অক্সিলারি ফোর্স’ নিয়োগ। এই ফোর্সে বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যারা পুলিশ বাহিনীর সহায়তা করবে। পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন অনুযায়ী, তিনি এই ফোর্স নিয়োগ দিতে পারবেন এবং তারা একইভাবে পুলিশের মতো দায়িত্ব পালন করবে।
কীভাবে কাজ করবে অক্সিলারি ফোর্স?
নতুন এই অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যরা পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন। তাদের একটি বিশেষ ব্যান্ড বা চিহ্ন থাকবে, যা তাদের পরিচয়কে সহজেই শনাক্তযোগ্য করবে। এরা পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় মাঠে নামবে, এবং তারা পুলিশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, যার মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তার বা আটক করা।
পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে?
ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল এবং আবাসিক এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে অক্সিলারি ফোর্সের সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব এলাকায় প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হয়, যা মোকাবিলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। ফলে, এই নতুন ফোর্স ঢাকার পুলিশি সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: নিরাপত্তার জন্য সহায়ক, কিন্তু নজরদারি জরুরি
তবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের বাহিনী প্রতিষ্ঠা করলে তা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে। তারা বলছেন, এই ফোর্সের সদস্যদের নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও সঠিক যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন, যাতে তারা কোনো ধরনের অপব্যবহার বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের শিকার না হন। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই ফোর্সের সদস্যদের যথাযথভাবে নির্বাচন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করার সময় কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি না করে।”
প্রধান উদ্বেগ: কর্তৃত্বের অপব্যবহার
একটি বড় উদ্বেগ হলো, অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যদের কাছে পুলিশি ক্ষমতা দেওয়া হলে, তারা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তবে তা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণে, যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার জন্য সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
পুলিশি কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করবে তত্ত্বাবধানে
ডিএমপির কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, এই ফোর্সের সদস্যরা নিরপেক্ষ ও দক্ষভাবে কাজ করবে, এবং তারা পুলিশের মত দায়িত্ব পালন করবে। তবে, এ ব্যাপারে মনিটরিং ও যাচাই-বাছাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে, যাতে তাদের কাজের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট থাকে।
তুলনা: দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী
এই ধরনের এক্সটেনশনের ফলে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, তবে আগের সময়ে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীকেও পুলিশের সহায়ক বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যদিও আনসার বাহিনীকে পুলিশের ক্ষমতা দেয়া হলেও, তা একেবারে ভিন্ন পরিস্থিতির ছিল, যেখানে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল প্রধান লক্ষ্য।
অক্সিলারি ফোর্সের সাথে তুলনা করলে, আনসার বাহিনী সাধারণত কিছু বিশেষ কাজের জন্য নিয়োজিত থাকলেও, তাদের ভূমিকা ছিল সীমিত এবং পুলিশ বাহিনীর সাথে পূর্ণ সমন্বয়ে কাজ করতেন। তবে, এখন যে নতুন অক্সিলারি ফোর্স গঠন করা হচ্ছে, তা পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত এবং শক্তিশালী করতে সক্ষম হতে পারে।
সামাজিক প্রভাব এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে, ঢাকা শহরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত হতে পারে। তবে, এর পাশাপাশি এটি যে সামাজিক, আইনি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে, তা প্রত্যাশিত। বিশেষত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে গিয়ে সম্ভাব্য দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, সমাজে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নতুন এই বাহিনীর প্রতি নাগরিকদের আস্থা অর্জন করা প্রয়োজন, যাতে তারা পুলিশ বাহিনীর সাথে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে পারে। এটি দেশটির আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং জনগণের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক হতে পারে, তবে সঠিকভাবে এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।