বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রকৃত বন্ধু রাষ্ট্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে এটি স্পষ্ট যে, যারা নিজেদের তাদের বন্ধু বলে দাবি করে, তারা মূলত নিরুপায় হয়েই এই সম্পর্ক মেনে নেয়। বাস্তবতা হলো, এসব রাষ্ট্র মূলত শোষণমূলক নীতিতে চলে, যেখানে তাদের নিজস্ব স্বার্থই প্রধান। অন্য দেশের কল্যাণ বা সার্বভৌমত্ব তাদের কাছে গৌণ।
গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে—
“বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ছেড়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প!”
কেউ কেউ এটিকে “ব্রেকিং নিউজ” হিসেবে প্রচার করছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জার বিষয়। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে যদি কেউ এমন তথ্যকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় বা এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তবে সেটি তার দেশপ্রেমের অভাবই প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, আইন ও নীতিমালা। অন্য কোনো দেশের নেতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেন না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার বাংলাদেশের জনগণের।
দুঃখজনকভাবে, কিছু মানুষ মনে করে, দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক সমস্যার সমাধান বিদেশি শক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটা কি সত্যিই দেশপ্রেমের পরিচায়ক?
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ট্রাম্প বা মোদির হাতে কে দিল?
১৯৭১ সালে রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কখনোই অন্য কারও হাতে ন্যস্ত করা যায় না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা কেবলমাত্র এ দেশের জনগণের হাতেই থাকা উচিত। কোনো বিদেশি শক্তির কাছে জাতীয় স্বার্থ সমর্পণ করা মানেই দেশের স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়া।
বিদেশি রাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটি কখনোই এ দেশের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাই আমাদের উচিত নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সজাগ থাকা।
বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল এ দেশের জনগণের। যারা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে, তারা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে ব্যর্থ। আমাদের উচিত দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং কোনো বিদেশি শক্তির হাতের ক্রীড়নক না হওয়া।
আনোয়ার শাহজাহান, সিলেট