যেভাবে হলো ‘বয়কট শব্দটির প্রচলন

বিরোধলের নির্বাচন বয়কট হোক বা সামাজিক মাধ্যমে কিছু এক্টিভেটসদের ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহব্বান বা কিছু দিন আগের কথাই বলি ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট’ভাঙতে ১৫ দিন তরমুজ না কিনলে কমে যাবে ফলটির দাম। এই ভাবনা থেকে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে ফলটিকে বয়কটের ডাক দেন সাধারণ নাগরিকরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এই শব্দটি এখন সবার কাছে বেশ পরিচিত। বয়কট মূলত প্রতিবাদের অভিব্যক্তি হিসাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয় । কিন্তু কখনো কি মনে হয়েছে! জনপ্রিয় এই শব্দটি উতপত্তি কোথা থেকে! চলুন জেনে নেওয়া যাক

এই বয়কট শব্দটির আবির্ভাব হয়েছিল বয়কট নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমেই। বয়কট লোকটির সম্পূর্ণ নাম চার্লস কানিংহাম বয়কট। ১৮৩২ সালে ইংল্যান্ডের নরফোকে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। একটা সময় তাঁর কীর্তিকলাপের জন্য তাঁকে একঘরে করছিলেন আয়ারল্যান্ডের মায়ো কাউন্টির বর্গাচাষিসহ স্থানীয় লোকজন। কিন্তু কি এমন করেছিলেন বয়কট !

বেশ ধনী পরিবারে জন্ম হওয়ায় বয়কটের ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবেন। এজন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৮৪৯ সালে যোগ দেন আর্মির ক্যাপ্টেন পদে। এরপর চাকরির সুবাদে বদলি হয়ে আসেন আয়ারল্যান্ডে। আর এখানেই ১৮৫১ সালে অসুস্থ হওয়ার পর ছেড়ে দেন সেনাবাহিনীর চাকরি। অতঃপর আয়ারল্যান্ডে স্থায়ী হয়ে বিয়ে করেন মেরি আন দুনেকে।

বয়কট চাষবাসের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডের আর্ল অফ আর্নের জমি বিক্রি ও দেখভালের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সেসব জমি চাষ করা কৃষকদের থেকে খাজনা আদায়, জমির হিসেব বুঝিয়ে নেওয়াসহ তাদের ওপর অত্যাচার ও জমি থেকে উচ্ছেদ করাই ছিল তার কাজ।

বয়কট ভাবতেন, জমি ও কৃষকের প্রভু জমির মালিক। কথা না শুনলে বর্গাচাষীদের উপর নির্যাতনের পাশাপাশি কেড়ে নিতেন তাদের অল্প সম্পত্তিও।খাজনার অত্যাচার ও উচ্ছেদ থেকে বাঁচতে নির্যাতিত কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। ১৮৭৯ সালে মাইকেল ডেভিড নামে এক কৃষকের নেতৃত্বে গঠন হয় আইরিশ ন্যাশনাল ল্যান্ড লিগ। মালিক যে জমি তার নয় বরং লাঙল যার জমি তার দাবি আদায়ে সোচ্চার হন কৃষকরা। উচ্ছেদকৃত কৃষকরা একসময় বিচার জানান কেন্দ্রীয় সংসদে। সংসদ সদস্য সেসময় কৃষকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এরপর যেন বয়কটের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

কেউ বয়কটের জমি চাষ করেন না, ক্ষেতে সেচ দেন না। এভাবে সব ক্ষেত শুকিয়ে যেতে লাগলো। কেউ বয়কটের সঙ্গে কথা বলেন না, এমনকি ডাকপিয়নও বয়কটের ডাকে সারা দেন না। এই ঘটনা তখন ফলাও করে প্রচার করা হয় গণমাধ্যমে।

একপর্যায়ে বয়কট পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। অনেকটা আড়ালে থেকেই ১৮৯৭ সালে মারা যান বয়কট। ১৮৮৮ সালে অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে জায়গা করে নেয় ‘বয়কট’শব্দটি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * যেভাবে হলো ‘বয়কট শব্দটির প্রচলন
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ