ইনকা বীরের হাতে গড়ে উঠা রহস্যময় স্বর্ণের শহর পাইতিতি

সোনার শহরের কথা উঠলে চেখের সামনে প্রথমেই ভেসে উঠে সেই স্বপ্নের শহর ‘’পাইতিতির কথা। সোনায় ভরা শহর নিয়ে ইনকা সভ্যতার যত গল্প রয়েছে, তা বোধ হয় আর কোনো সভ্যতার নেই।যেখানে ছড়িয়ে  রয়েছে সোনা আর গুপ্ত ভাণ্ডার।

যুগ যুগ ধরে মানুষ এই নগরীর খোজ করে চলেছে। তবে আজ পর্যন্ত মেলেনি হারানো শহরটির সন্ধান। কেচুয়ান জনগোষ্ঠী  ইনকাদের শেষ উত্তরসূরি ছিল। এই সম্প্রদায়ের মতে স্বর্ণ ও রত্নে ঠাসা শহর লুকিয়ে আছে দূর্গম পাহাড়ের আড়ালে, সেখানে বয়ে চলেছে অবিরত ঝর্নার ধারা।

১৫৩৩ সালে ভিলকাবামবা শহরে ছিল ইনকাদের সাম্রাজ্য । দীর্ঘ চল্লিশ বছর যুদ্ধের পর ১৫৭২ সালে স্পেনীশরা ইনকাদের পরাজিত করে দখল করে নেয় ইনকা নগরী।  ধারনা করা হয়, যুদ্ধ চলাকালীন সময় চতুর ইনকা সমপ্রদায় বেশির ভাগই তাদের স্বর্ণ,রুপা আর মুল্যবান সব জিনিসপত্র গহীন বনের ভেতরে লুকিয়ে ফেলে ।

যেহেতু ইনকা সম্প্রদায় তাদের ধন-সম্পদের জন্য পরিচিত ছিল, তাই স্পেনীয়রা সাম্রাজ্য দখল করার পরই এইসব ধন সম্পত্তি খুজতে শুরু করে।  তবে খুব বেশি ধন-সম্পত্তি স্পেনীয়রা খুঁজে পায়নি। এই সম্রাজ্জের পাহাড়সম সম্পত্তি রয়ে যায় গহীন অরণ্যের আড়ালেই।

যা হারিয়ে যাওয়ার ৫০০ বছর পর এখনও শত শত মানুষ ধন-সম্পত্তির আশায় চষে বেড়াচ্ছে আন্দিজ পর্বতমালা সহ সম্ভাব্য অনেক যায়গা। কিন্তু সোনাদানা তো দুরের কথা কেউ পাইতিতির কোন চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। যদিও অনেকেই দাবী করেন, সন্ধান পেয়েছেন তবে, যথাযত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার  কারো মতে, এই শহর খুঁজে পাওয়া গেলেও তা ইচ্ছাকৃত ভাবেই লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

ইতালীয় প্রত্নতত্ববিদ মারিও পোলিও ২০০১ সালে, রোমের একটি আর্কাইভে, ‘পাইতিতি’ নিয়ে আন্দ্রেজ লোপেজ নামের এক মিশনারীর করা দলিল খুঁজে পান।১৬০০ সালে করা ঐই দলিলে তিনি বর্ননা করেন পাইতিতির স্বর্ণ, রুপা আর যাবতীয় মুল্যবান সম্পত্তির কথা। দলিলটিতে উল্লেখ আছে, পাইতিতি আসলে ঘন অরণ্যের ভেতর অবস্থান করা এক শহর, যার আশে পাশে ছিল বেশ কিছু ঝর্না।

আমেরিকার গ্রেগরি ডেয়েরমেঞ্জিয়ান, এই শহর খুঁজে পেতে ২০ বছর ধরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৪ সালে তিনি পাইতিতি খুঁজতে এক দল মানুষকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। সেই যাত্রায় এই স্বর্ণ শহর খুঁজে না পেলেও, তারা খুঁজে পায় ঐই সভ্যতার কিছু নিদর্শন।

২০০৮ সালের দিকে গ্রেগরি আর তার দল পেরুর কিমবিরি অঞ্চলের বনের মধ্যে খুঁজে পায় ৪০ হাজার বর্গমিটারের একটি পাথরের ধ্বংসাবশেষ। অন্যদিকে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিধ থিয়েরি জামিন ১৫ বছর ধরে এই শহরে খোজ করে যাচ্ছেন। সে আমাজনের একটা অংশে বিশালাকায় পাথরে ইনকাদের কিছু লেখা খুঁজে পায়। এটি পাইতিতির মানচিত্র হতে পারে বলে ধারনা করা হয়।

রহস্যময় এই পাইতিতি খোঁজার অভিযান নিয়ে  অনেক ধরণের ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। তবে দর্শক,  হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণের শহর পাইতিতি এখনও পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে রয়ে গেলেও গ্রেগ  ডেয়ারমেঞ্জিয়ান দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন যে তিনি এবং তার দল শীঘ্রই পাইতিতি আবিষ্কার করতে সফল হবেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ইনকা বীরের হাতে গড়ে উঠা * রহস্যময় স্বর্ণের শহর পাইতিতি
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ