রাজনীতি করলে কোটিপতি ব্যবসা করলে শিল্পপতি কৃষক হলে ঋণগ্রস্ত সেচ মূল্যে বিপাকে কৃষক 

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
সারাদেশের মতো উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ধান সমৃদ্ধ জেলা জয়পুরহাটেও বোরো চাষের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু সেচ পানির উচ্চমূল্যের কারণে বোরো আবাদে পানি সেচ দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন জেলার কৃষকেরা। সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আলু/ইরি বোরো চাষিরা।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের হোপ পীরহাট মৌজার গভীর নলকূপের মালিক বাবলু হোসেনের বিরুদ্ধে  সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা অতিরিক্ত ও অগ্রিম টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদের জমিতে সেচ দিচ্ছেনা অভিযুক্ত বাবলু। যার ফলে জমিতে চাষ দিতে পারছেন না তাঁরা। এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা৷
লিখিত অভিযোগসুত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত গভীর নলকূপের মালিক বাবলু হোসেন আলু সেচের জন্য প্রতি ৩৩ শতকে ১৪০০ টাকা ও ইরি বোরো ধান সেচের জন্য ৩৩ শতকে ২০০০ হাজার টাকাসহ ৩৩ শতকে মোট ৩৪০০ টাকা আদায় করছেন। এ ছাড়াও অগ্রিম সব টাকা পরিশোধ না করলে গভীর নলকূপ মালিক বাবুল কোন জমিতে সেচ দিচ্ছেন না। ফলে জমিতে চাষ দিতে পারছেন না ভুক্তভোগী কৃষকরা। অথচ পার্শ্ববর্তী নলকূপ মালিকরা ৩৩ শতকে আলু সেচ ১ হাজার টাকা এবং ইরি/বোরো দেড় হাজার টাকাসহ মোট আড়াই হাজার টাকা নিচ্ছে।
বছরে কৃষিখাতে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মটরচালিত সেচ পাম্পে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সিংহভাগ টাকা। উপজেলায় বছরে সেচ পাম্পে প্রায় লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হলেও সুবিধার পুরোটাই ভোগ করছে মালিকপক্ষ বলে অভিযোগ। যার ছিটেফোটাও পাচ্ছে না বলে দাবি প্রান্তিক কৃষকদের। অবাক করা ব্যাপার হলো অনেক কৃষক জানেই না তারা ভর্তুকির টাকা পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকগণ দাবী সচেতন মহলের৷
উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের হোপপীর হাট এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, হারুন উর রশিদ, সোহেল রানা, শাজ্জাদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিনসহ ২০-২৫ জন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ওই গ্রামের বাবলুর ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিচালিত গভীর নলকূপের বাবলু হোসেন কৃষকদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি আলু ৩ হাজার ৪০০ করে টাকা দাবি করেন। কৃষকেরা উপজেলা সেচ কমিটির নির্ধারিত রেট অনুযায়ী টাকা দিতে চাইলে বাবুল তা নিতে অস্বীকার করে৷
অভিযুক্ত গভীর নূলকুপ মালিক বাবলু হোসেন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, দ্রব্য মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং আমার নলকূপের ট্যান্সফর্মার চুরি হওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি টাকা নিচ্ছি। অন্যরাও নিচ্ছে আমিও নিচ্ছি।
স্থানীয় কৃষকদের দাবী বাংলাদেশের কৃষক এখন ভালো নেই: প্রান্তিক ও বর্গা ভূমিহীন কৃষকদের স্বার্থে কেউ কাজ করে না রাজনীতি করলে কোটিপতি  ব্যবসা করলে শিল্পপতি কৃষক হলে ঋণগ্রস্ত বিভিন্ন সময় কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পয়না৷
জানতে চাইলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আক্কেলপুর জোনের (ক্ষেতলালের অতিরিক্ত দা:প্রা) সহকারী প্রকৌশলী মুনছুর রহমান সরদার বলেন, সেচ কমিটির কাছে সেচের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখব। যদি বেশি নেয় আমরা প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ বছর উপজেলায় ১০ হাজার ৫১৩ হেক্টর জমিতে ইরি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট গভীর নলকূপ রয়েছে ৩৬৫ টি। এর মধ্যে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ৫৯টি ও বিএডিসি পরিচালিত ৫ টি। বাকি ৩০৩টি ব্যক্তিমালিকানাধীন।
উপজেলা সেচ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত উভয় ধরনের গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে প্রতি ৩৩ শতকে আলু সেচ ৮০০ টাকা, ইরি/বোরো ধান চাষে উঁচু জমির জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা ও নিচু জমির জন্য ১ হাজার ৩০০ টাকা সেচ খরচ নির্ধারণ করা হয়। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে বড়তারা ইউনিয়নকে নিচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যে গভীর নলকূপ মালিকদের জানানোসহ এলাকায় অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফতাবুজ্জামান আল ইমরান বলেন, কৃষকদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সেচ কমিটিকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * বিপাকে কৃষক
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ