কালাই বিএনপি তিন গ্রুপে বিভক্ত, ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো
এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই উপজেলা প্রতিনিধিঃ
যেকোন দলের জন্য অন্ত:কোন্দল এক আতঙ্কের নাম। অন্ত:কোন্দল কখনই সুখের হয় না, এটি ধ্বংসের বার্তা বহন করে। এই অন্ত:কোন্দলের প্রভাবে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়। দলটি প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া এখন একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গেলে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে,এমনটি ভাবছেন বিএনপি’র প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় দলীয় অন্ত:কোন্দলে জ্বলছে কালাই উপজেলা বিএনপি।
কালাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,২০১৫ সাল থেকে কালাই উপজেলা বিএনপি দীর্ঘ ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে প্রকাশ্যে এসেছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কমিটিতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এজন্য দলে আর কেউ সক্রিয় হচ্ছেন না।২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির বেশির ভাগ সদস্যও নিষ্ক্রিয়।
উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে দলের মধ্যে মতপার্থক্যের সূত্রপাত হয়।এই আহবায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে এখন প্রকাশ্য কোন্দল দেখা দিয়েছে।যার কারণে উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতি তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নিজ ঘরের আগুনে যেন জ্বলে-পুড়ে মরছে দলীয় নেতা-কর্মীরা।বিবাদমান তিন গ্রুপ একে অপরকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ।দলীয় অন্তঃকোন্দলে আর গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপির দুর্গখ্যাত কালাই উপজেলা বিএনপি এখন অস্তিত্ব সংকটে। মূলত নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা তিন গ্রুপে বিভক্ত এবং নিস্ক্রিয় হওয়ার কারণে মাঠের রাজনীতিতে দলটি একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পরেছে।
উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের তথ্যের অনুসন্ধানে জানা যায়,দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা এতটাই ক্ষীণ হয়েছে যে,নেতা-কর্মীদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।এরপরে আবার “কমিটি” ইস্যুতে তিন গ্রুপের তৃমূখী অবস্থানে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পরেছে।এই পরিস্থিতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি এখন হয়ে ওঠেছে স্থানীয় বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কালাই উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান আহবায়ক মো:ইব্রাহিম হোসেন মন্ডল। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির বর্তমান ১নং যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মওদুদ আলম এবং তৃতীয় পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জয়পুরহাট ০২ আসনের বিএনপি’র সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা গ্রুপের সমর্থিত নেতাকর্মীরা।এই তিন গ্রুপের নেতাকর্মীদের ১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন দিবসে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করতে দেখা গেছে।
দলীয় অন্তঃকোন্দলের কারণ জানতে চাইলে কালাই পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ লিটন(মওদুদ পক্ষ) জানান, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পরামর্শ না নিয়ে এবং কাউন্সিল ছাড়াই জেলা বিএনপিকে ম্যানেজ করে মো: ইব্রাহিম হোসেন মন্ডল তার পছন্দের লোক দ্বারা একটি ‘পকেট কমিটি’ করার অপকৌশল করছে।
অপরদিকে,দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ হিসাবে কালাই উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য (ইঞ্জিনিয়ার পক্ষ ) মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল বলেছেন,দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং থাকার কারণে “আহবায়ক কমিটি”ঘোষণার পর থেকে অন্তঃদ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। কিছু ‘স্বার্থপর’ নেতার কারণে কমিটিতে বেশির ভাগ ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সক্রিয় নেতাকর্মীদের অনেকেই বাদ পড়েছেন।এজন্যই নিজেদের মধ্যে এসব গ্রুপিং ও কোন্দলের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এর প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
কালাই উপজেলার সাবেক ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ তাজউদ্দিন আহমেদ তাজ(ইব্রাহিম পক্ষ) বলেন,বর্তমান আহবায়ক কমিটির দুই-এক নেতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে চান,আমরা কারও ব্যক্তি রাজনীতি করিনা,ধানের শীষ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনীতি করি।দলের শীর্ষ নেতৃত্বে মতভেদ ও বিভাজন থাকায় নেতিবাচক প্রভাব সবজায়গাতে পরেছে। তবে বর্তমান জয়পুরহাট জেলা বিএনপির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের নিয়ে কালাই উপজেলা বিএনপি পূর্ণগঠন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কালাই উপজেলা বিএনপির রাজনীতি ৩ গ্রুপে বিভক্ত থাকার কথা স্বীকার করে মোঃ মওদুদ আলম বলেন,’আমার সঙ্গে তিনি (মোঃ ইব্রাহিম হোসেন) পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কার্যক্রম নিয়ে মতবিরোধ করেন। জেলা বিএনপি’র সহযোগিতায়,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর নির্দেশে ইব্রাহিম হোসেন ও আমার একটি সমঝোতা হয়। আমি তারেক রহমান ও দলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জেলা বিএনপি’র সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দল ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কালাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর সিদ্ধান্তকে অসম্মান করেছেন।’তিনি ইউনিয়ন কমিটি গুলোতে তার পছন্দের কর্মীদের নাম দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছেন,বলেই তার সঙ্গে আমার মতের অমিল দেখা দিয়েছে।
কালাই উপজেলা বিএনপি’র আহবাহক ও সাবেক পুনট ইউপি’র চেয়ারম্যান মো: ইব্রাহিম হোসেন মন্ডল জানান, আমার উপর আরোপিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি দু:সময়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছি। বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে একাধিক মামলা ঘাড়ে নিতে হয়েছে। দলের জন্য যা করেছি তা স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ভাল জানে। আর দলের মধ্যে গ্রুপিং আছে এটা ঠিক না। তবে হাতে গোনা ২/১ জন এই কাজ করছে। তারা দলকে ভাঙ্গতে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এ ধরনের কর্মকান্ড চালাচ্ছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে qজয়পুরহাট জেলা বিএনপি’র বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কালাই উপজেলা বিএনপি সুসংগঠিত হচ্ছে।আশা করছি,আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারব।
মুঠোফোনে কালাই উপজেলা বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিন ভাগে বিভক্ত এমন প্রশ্ন করলে জয়পুরহাট জেলা বিএনপি’র ০১ নং সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মাসুদ রানা প্রধান একই বলেন,আমাদের বিএনপিতে কোনো বিভাজন নেই।ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। তবে বিএনপি একটি বড় দল।সময়ের সাথে সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে কেউ যদি দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে দলের সুনাম ক্ষুন্ন করে,তাহলে এমন নেতাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে কালাই উপজেলার সব ইউনিটের কমিটি প্রকাশ্য কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে আহবায়ক কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।