পুলিশকে ভয় দেখানোর নতুন কৌশলে বিএনপি
সদরুল আইন, প্রতিনিধি:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিকে কেন্দ্র করে নতুন ষড়যন্ত্রের কূটচালে মেতে উঠেছে বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেশের জেলা-উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের খুন, গুম এবং তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির মধ্যে রয়েছে: ১. মামলার সময়কার সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম ও পরিচয়। ২. ঐ সময়কার সংশ্লিষ্ট সহকারী পুলিশ সুপার, সার্কেল পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (মেট্রোর ক্ষেত্রে- এসি- জোন, ডিসি-জোন) নাম ও পরিচয়। ৩.মিথ্যা ও গায়েবি মামলা রুজুকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয়। ৪. মিথ্যা ও গায়েবি মামলা তদন্তকারী কর্মকতার নাম ও পরিচয়। এসব বিষয়ে তথ্যাদি প্রদানের জন্য জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক পুলিশ কতর্মকর্তা সালাউদ্দীন খানকে মনোনীত করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১ জুন) সারা দেশে গুম, খুন, অপহরণ ও গুরুতর জখমের শিকার নেতা-কর্মীদের তালিকা করার লক্ষে বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদককে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়। বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে মহানগর, জেলা, উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কতজন নেতা-কর্মী ও সমর্থক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ক্রসফায়ারে’, নির্যাতনে বা অন্য কোনোভাবে নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন; কতজন অপহরণ, গুম হয়েছেন; সরকারি দলের হামলায় কতজন খুন-জখম হয়েছেন- তাঁদের দলীয় পরিচয়সহ নাম-ঠিকানা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে জরুরি ভিত্তিতে অনুরোধ করা গেল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এই ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই বিএনপি এই ধরনের চিঠি দেশের জেলা-উপজেলা এবং মহানগরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্রটি বলছে, পুলিশকে ভয় দেখানোর জন্যই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশের ওসি, এএসপি, এসপি, আ্যডিশনাল এসপি কিংবা মেট্রোপলিটনের ক্ষেত্রে এসি, ডিসি- এমনকি মামলার রুজুকারী কর্মকর্তা এবং তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এটি বিএনপির একটি নতুন কৌশল। যে কৌশলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর মানসিক শক্তিকে দুর্বল করার একটি ষড়যন্ত্র।
কেননা, বিএনপি যখন বাসে আগুন দেয়, জ্বালাও-পোড়াও করে, রাস্তা অবরোধ করে যানজটের সৃষ্টি করে, সাধারণ মানুষের জানমালের উপর নিরাপত্তা হুমকির আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তখন একমাত্র পুলিশ বাহিনীই তাদের এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করে থাকে। যে কারণে পুলিশ বাহিনীকে আতঙ্কগ্রস্থ করতেই বিএনপি এই নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। এ ধরনের কার্যক্রম বিএনপি দলীয়ভাবে অনেক আগে থেকে পরিচালনা করে থাকলেও মার্কিন নতুন ভিসা নীতিকে পুঁজি করে বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে এনেছে। এটি আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দমন করার একটি কৌশলমাত্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে এই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।
যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ হবে- তাদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ‘উপর পর্যায়ে যাবে বলতে- কোথায় যাবে? এমন প্রশ্নে সালাউদ্দীন খান বলেন, ‘দেশের বাইরেও যাবে।’
‘আমেরিকান নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরই কি আপনারা এটা করছেন? এটা কি নতুন ভিসা নীতির মধ্যে পড়ে কি না? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ভিসা নীতি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন। এইটা ভিসা নীতিতে পড়ে কি না। তারা জনসমাবেশে বাধা দিল, মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করলো এগুলো তো ভিসা নীতিতে বলাই আছে। চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমাদের জনসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে, পূর্বেও করেছে এবং এখনও করছে এরকম।
কবে থেকে এটা শুরু হয়েছে? প্রশ্নে তিনি জানান, এটার কার্যক্রম আনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে অনেক পরে। এ কার্যক্রম ২০১৭ সাল থেকে শরু হয়েছে। এর আগে এটা সামনে আসেনি, কারণ হচ্ছে- এখন আমরা সারা বাংলাদেশে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছি আগে বিষয়টি গোপন ছিল, এখন সেটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।