আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি গাজীপুর মডেলে?
সদরুল আইনঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে, কোন আদলে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আলাপ-আলোচনা চলছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকবেন এবং এই দাবি ছাড়া তারা কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া যারা বাধাগ্রস্থ করবে, তাদের ভিসা দেবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফলে সুস্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি যদি নির্বাচন থেকে দূরে সরে যায় এবং নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করে, সেই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খড়গ নেমে আসতে পারে বিএনপির ওপরেও।
কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা নীতিতে যে সমস্ত অংশীজনের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের মধ্যে বিরোধী দলও রয়েছে। ফলে বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে কি করবে- তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ তারা গ্রহণ করবে না। বরং আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই চাইছে, আগামী নির্বাচন থেকে বিএনপি যেন দূরে থাকে।
গাজীপুরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে এই নিয়ে আরও উৎসাহ এবং উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা এখন গাজীপুর মডেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পক্ষপাতি।
গাজীপুর মডেল কি? এই নির্বাচনে তো আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগের গাজীপুর মডেল নিয়ে এতো উৎসাহ কেন?
গাজীপুরের নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,গাজীপুরে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ এবং তার বিদ্রোহী প্রার্থীর মা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের এ নিয়ে কোনো দুঃখ নেই। কারণ যে কোনো বিচারে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে। প্রশাসন ছিল নিরপেক্ষ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। নির্বাচন কমিশন কঠোর হাতে সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন হয়েছে।
এটি হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও একটি মডেল। বিএনপি যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে আগামী নির্বাচন ২০১৪’র মডেলে হবে না। বরং গাজীপুর মডেলে হবে- এমনটি বলছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা।
তারা বলছেন, যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে, সেই নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো স্ব স্ব অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কোনো রাজনৈতিক জোট থাকবে না। বরং প্রত্যেকটি দল তাদের নিজ নিজ উদ্যোগে প্রার্থী দিবেন এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক প্রার্থী থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন হবে এবং জনগণ ভোট দিবে।
এ রকম একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন হলে- সে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে এবং অংশগ্রহণমূলক হবে।
অনেকেই মনে করেন বিএনপি গণতন্ত্রের শত্রু। বাংলাদেশের শত্রু এবং তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চায়। শেষ পর্যন্ত যদি তারা নির্বাচনে না আসে, তাহলে সেটি দেশের জন্য মঙ্গল, জনগণের জন্য মঙ্গল এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল।
আর তাই আওয়ামী লীগে এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার প্রচেষ্টায় কোনো রকম আগ্রহ নেই। বরং তারা অন্যান্য ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো- যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী, যাদের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় শক্তি-সামর্থ্য আছে, তাদেরকে নির্বাচনমুখী করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত।
ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় মহাজোটকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। মহাজোটের দ্বিতীয় শরিক দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি ঘোষণা করেছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
ইসলামী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সব মিলিয়ে একটি নির্বাচনের আবহ তৈরি করা এবং যেখানে বিএনপি থাকবে না- এমন একটি আবহ তৈরি করাই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় আগ্রহের জায়গা।