নির্বাচনে যেতে বিএনপির ১০ শর্ত
সদরুল আইনঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই সমঝোতার অংশ হিসেবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে।
ভিসা নীতি ঘোষণার পরপরই প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকে মার্কিন দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তাদের সাথে নতুন ভিসা নীতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক এবং আলাপ-আলোচনা করছে। সেই বৈঠক এবং আলাপ আলোচনার মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে গিয়ে একটি সমঝোতা প্রস্তাব এর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সেই সমঝোতার প্রস্তাবে বিএনপির পক্ষ থেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে কিছু বাধা এবং অন্তরায় এর কথা বলা হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে দশটি প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যদি নাও মানা হয় তাহলে বিএনপি তাদের এই দশ দফা দাবি যদি অর্জিত হয় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিএনপি দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দাবিটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছেঃ
১. বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বদলে এমন কোন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে যিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
সংবিধান কাঠামের মধ্যে এরকম কাউকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা যেতে পারে।
২. নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী থাকবে যারা প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সময়ে পরামর্শ দিবেন এবং এই পরামর্শকদের পরামর্শেই নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হবে।
৩. প্রশাসনের পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং উপদেষ্টামন্ডলীর সুপারিশ অনুযায়ী প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আবার পুনর্বিন্যাস করতে হবে, ঢেলে সাজাতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
৫. বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাদ দিয়ে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই কমিশন গঠন করবে।
৬. নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়ন করতে হবে এবং তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে।
৭. নির্বাচনে পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাচন পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।
৯. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার স্বার্থে বিএনপির যে সমস্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়রানি ইত্যাদি রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।
১০. বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচনের সময় যে সুযোগ সুবিধা পাবেন বিএনপি প্রধানও একই রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
এই দশটি প্রস্তাবকে আওয়ামী লীগ অবাস্তব বলেছে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলেছেন যে এটির সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কোনো পার্থক্য নেই, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে কূটনীতিকরা বলছেন, এটি বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের সবটুকু যে গ্রহণ করা হবে এমনটি নয়।
তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের জন্য একটা সম্মানজনক সমাধান খুঁজে বের করা হবে।