মোঃ মামুনুর রশিদ আবির, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল ও চিকিৎসক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। ফলে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও, এখনো তা কাগজেই সীমাবদ্ধ। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বাস্তবে ৫০ শয্যার সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
৩১ শয্যার কাঠামোতেও শূন্য পদ ভরপুর
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০–৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে, ৫০–৫৫ জন রোগী অন্তর্বিভাগে এবং ২০–৩০ জন রোগী ল্যাবে সেবা নিতে আসেন। অথচ হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ১২২টি জনবল পদের মধ্যে ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
শুধু চিকিৎসক পর্যায়েই ৯ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন — একজন গাইনি কনসালট্যান্ট ও একজন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসার। এছাড়া ঘোড়াঘাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে একজন চিকিৎসক মাঝে মাঝে এসে কাজ করেন।
এছাড়াও, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চিসহ বহু পদ শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে।
ভবন নতুন, সমস্যা পুরনো
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার পরিচালিত হচ্ছে ভাড়া করে আনা অস্থায়ী এনেস্থেসিওলজিস্ট দিয়ে। প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারীকে, যা কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
সরেজমিনে হতাশার চিত্র
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন। একজন মাত্র চিকিৎসক পুরো বহির্বিভাগ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সোনারপাড়া গ্রামের মঈন উদ্দিন বলেন, “এই হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, ইমারজেন্সি রোগী নিয়ে আসাই ঠিক না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা মিলছে না।”
ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়, অপর্যাপ্ত সেবা, ল্যাব ও এক্স-রেতে দীর্ঘ লাইন আর উপরের তলায় শয্যা না পেয়ে রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ব্যাখ্যা
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান বলেন, “৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও, বাস্তবে ৩১ শয্যার কাঠামোতেও প্রয়োজনীয় জনবল নেই। মাত্র ২ জন চিকিৎসক এবং একজন গাইনি কনসালট্যান্ট দিয়ে পুরো হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে, যা কার্যত অসম্ভব।”
তিনি আরও জানান, “এই সংকট নিরসনে নিয়মিত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”