হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশারঃসকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম। বর্তমানে বাতিল ফিরক্বারা বলে থাকে, পবিত্র শবে বরাতে বা লাইলাতুল বরাতে রোযা রাখার কোন দলীল নেই, এ দিন নির্দিষ্ট করে রাখা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অথচ ছিহাহ সিত্তার অন্যতম ছহীহ কিতাব “মুসলিম শরীফে” এই দিনে রোযা রোযা রাখার স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ করেন-অর্থ: হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, সাইয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি পবিত্র শা’বান মাস উনার মধ্যভাগে (লাইলাতুল বরাতে) রোযা পালন করেছিলেন? তিনি বললেন, না। তখন সাইয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যখন আপনি রোযা পালন করেননি, তখন আপনি দুই দিন রোযা পালন করে নিবেন। (মুসলিম শরীফ: কিতাবুস ছাওম- বাবু ছাওমি শাহরী শাবান- হাদীছ নম্বর ২৬২২, ছহীহ ইবনে হিব্বান ৩৫৮৮, ফতহুল বারী ৪/২৩০, উমদাতুল ক্বারী ১৭/৯৯, শরহে মুসলিম লি নববী ৪/১৮১)
শুধু তাই নয়, এই রোযার গুরুত্ব এতই বেশি যে, এই দিনে রোযা না রাখলে, কাফফারাস্বরূপ পবিত্র রমাদ্বান মাসের পর দুই দিন রোযা রেখে নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে :অর্থ: হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, সাইয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক ছাহাবী (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি এ মাসের (শা’বান মাসের ১৫ তারিখ) মধ্যভাগে রোযা পালন করেছিলেন? তিনি বললেন, না। তখন সাইয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি তার বদলে রমাদ্বান মাস উনার রোযা শেষ করে দুই দিন রোযা পালন করবেন। (মুসলিম শরীফ: কিতাবুস ছাওম- বাবু ছাওমি শাহরী শা’বান- হাদীস নম্বর ২৬২৩)
কাজেই, ‘মুসলিম শরীফ’ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ কিতাব দ্বারাই প্রমাণিত হলো, পবিত্র শবে বরাত বা শবে বরাত উনার রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এই দিনে রোযা অস্বীকার করে তারা ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকারকারী। এরাই মানুষরূপী ইবলিস শয়তান। তারা চায় না মুসলমান উনারা বিশেষ দিনসমূহের আমল করে রহমত বরকত নিয়ামত হাছিল করুন। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র লাইলাতুল বরাতে রোযা রাখার ফযিলতঃ-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন,অর্থ : “আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাকের হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, যখন পবিত্র শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত বরবতপূর্ণ রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (দলীলঃ ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮, ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮, বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩)আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে, উক্ত পবিত্র রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা, তওবা-ইস্তিগফার করা, দিনে রোযা রাখা। প্রতি মাসে কমপক্ষে তিনটি রোযা রাখা খাছ সুন্নত। সে হিসেবে শবে বরাতের রোযার সাথে মিলিয়ে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোযা রাখা উত্তম।সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে তিনটি রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতী উটনিতে করে পুলছিরাত পর করাবেন।” (ইবনু নুবাতা)সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে তিনটি রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!যদি তিনটি রোযা রাখা সম্ভব না হয়, তবে অন্ততপক্ষে পবিত্র শবে বরাতের দিন অর্থাৎ ১৫ই শা’বান শরীফ দিনে রোযা রাখতে হবে।কেননা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ বরাতের রোযা রাখবে, তাকে কখনো জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।” সুবহানাল্লাহ!
‘নুযহাতুল মাজালিস’ নামক বিশ্ববিখ্যাত কিতাবে উল্লেখ আছে, নিশ্চয়ই জিন, পশু-পাখি এবং এমন কি সমুদ্রের মাছও অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ শা’বানের দিন রোযা রাখে।” সুবহানাল্লাহ!তাফসীরে রুহুল মায়ানী’তে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি পবিত্র লাইলাতুল বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনে রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ২০টি কবুল হজ্জের ছওয়াব এবং ২০ বছর রোযা রাখার ছওয়াব তার আমলনামায় লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে রোযার ফযীলত সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান মাসে অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতে মাত্র একটি রোযা রাখবে, তার দেহের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি দোযখের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতের মাঝে সে ব্যক্তি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন এবং তার সঙ্গে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম উনার ও হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় ছওয়াব দান করবেন।সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র শা’বান শরীফ মাসের ১৫ তারিখ যারা রোযা রাখবে, তারা ইফতারীর সময় ৩বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। তাহলে তার পূর্বের গুনাহখাতা ক্ষমা করা হবে এবং রিযিকে বরকত দেয়া হবে। যামানার ইমাম ও মুযতাহিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম সুলতানুন নাছীর মুরশিদ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মুসলমান উনাদেরকে এই সম্মানিত লাইলাতুল বরাত রাতে ইবাদত বন্দেগী করার এবং দিনে রোযা রাখার তাওফিক দান করুন।