সাভার, ঢাকা – ২০ জুলাই ২০২৪, বিকেল সাড়ে ৫টা। সাভারের শাহীনবাগ এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। ঠিক তখনই মডেল কলেজের সামনে একটি ভাড়া বাসার ছাদে খেলা করছিল সাভারের জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাদ মাহমুদ খান (১৩)। পাশের নিউমার্কেট এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকে সাদ। কৌতূহলবশত বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে, কিন্তু সে জানতো না, তার সামনে অপেক্ষা করছে মর্মান্তিক মৃত্যু। পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই নিহত হয় সাদ।
সাদের বাবা, প্রবাসী বাহাদুর খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মতো আর কারও সন্তান যেন পুলিশের গুলিতে মারা না যায়। আমাকে সব দিলেও আমি আমার সন্তানকে আর ফিরে পাব না।” চোখের জল মুছতে মুছতে বাহাদুর আরও বলেন, “আমার ইচ্ছে ছিল, আমার একমাত্র ছেলে কুরআনে হাফেজ হবে। দুই পাড়া মুখস্থও করেছিল। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে চাই, আমার ছেলের হত্যার বিচার যেন আল্লাহ দেন। আর কারও কাছে বিচার চাই না।”
গভীর শোকে কাতর বাহাদুর জানিয়েছেন, সাদকে হারানোর বেদনা সহ্য করা খুবই কষ্টকর। “আমার ছেলে ফুটবল খেলতে খুব পছন্দ করতো। সপ্তাহে একবার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বায়না করতো, সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতো। আজ আমি সেই ছেলেকে আর কখনও পাব না,” বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাহাদুর খান।
সাদ মাহমুদ খান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ধল্লা খানপাড়া গ্রামের প্রবাসী বাহাদুর খানের একমাত্র পুত্র। ছেলের লেখাপড়ার জন্য সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন বাহাদুর, যাতে তার সন্তান ভালো শিক্ষা পায়। সাদ সাভারের জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তবে, একদিন সাভারে আন্দোলনরতদের উপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তার একমাত্র সন্তান।
বাহাদুর জানান, পুলিশ তাকে বলেছিল “দৌড়ে দে!” এবং সেই মুহূর্তে পুলিশ সাদকে গুলি করে। সাদ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। এই ঘটনায় তার পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাদ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল না। তবে, বাহাদুর খানের দাবি, “এটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সংঘর্ষের একটি পরিণতি, যা আমার একমাত্র ছেলেকে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিলো।”
পরিবারে শোকের ছায়া, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরা বাহাদুর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ভিড় করছেন। এক প্রবাসী বাবা তার সন্তানকে হারিয়ে শুধু বিচার চান আল্লাহর কাছে, যাতে আর কোনো বাবা-মা তাদের সন্তানকে পুলিশের গুলিতে হারাতে না হয়।