চীনের শিল্প উৎপাদন খাত মে মাসেও সংকোচনের মধ্যে রয়েছে, যা দেশটিতে টানা দ্বিতীয় মাসের অর্থনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাময়িকভাবে শুল্ক যুদ্ধ থেকে বিরতি নেওয়া হয়েছে, তারপরও কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরছে না উৎপাদনে।
শনিবার (৩১ মে) প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চীনের পারচেসিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৫ পয়েন্টে—যা শিল্পখাতে সংকোচনের নির্দেশক। এপ্রিল মাসে এই সূচক ছিল ৪৯, তবে ৫০-এর নিচে থাকার অর্থ হলো শিল্প কার্যক্রম এখনো সংকুচিত অবস্থায় রয়েছে। পিএমআই সূচক যদি ৫০-এর ওপরে থাকে, তাহলে তা প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (এনবিএস) পরিসংখ্যানবিদ ঝাও সিংহে জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা সম্প্রসারিত হলেও শিল্পখাতে পুনরুদ্ধার ধীরগতিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে বাণিজ্য আদেশ পুনরায় পেতে শুরু করেছে, যা আমদানি-রপ্তানি খাতে খানিকটা গতি এনেছে।
অন্যদিকে, সেবা খাতেও স্থবিরতা স্পষ্ট। নন-ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই মে মাসে নেমে এসেছে ৫০.৩ পয়েন্টে, যা এপ্রিলের তুলনায় কিছুটা কম (৫০.৪)। এতে বোঝা যায়, সেবাখাতেও প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাচ্ছে।
চীনা সরকার চলতি বছর ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও বিশেষজ্ঞরা এটিকে উচ্চাভিলাষী মনে করছেন, কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা এখনো দুর্বল। পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝাং ঝিওয়েই বলেন, ‘‘অর্থনীতির গতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও কোম্পানিগুলো বাস্তবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’’
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার কারণে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই মাসে ৯০ দিনের জন্য উচ্চ হারে শুল্ক স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছে, তবে আলোচনার অগ্রগতি খুবই ধীর।
এদিকে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেইজিংকে সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদিও তিনি কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ দেননি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের অনিশ্চয়তা এবং শিল্পখাতে স্থবিরতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে চীনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বেশ কঠিন হয়ে উঠবে।