দিন যত যাচ্ছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে বর্তমানে ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের বরাত দিয়ে।
গত বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক জানান, গাজায় দ্রুতগতিতে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তিনি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (OCHA)-এর তথ্য তুলে ধরে বলেন, জরুরি খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক চাহিদা মেটাতে রাফাহ ও অন্যান্য সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় চালু করাটা এখন অত্যন্ত জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে ফারহান হক আরও বলেন, গাজার পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে সামান্যতম সহায়তা পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। কমিউনিটি কিচেনগুলোতে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জ্বালানির মজুদ শেষ হতে চলেছে। পাশাপাশি, বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি জানান, পানির সংকট, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অভাব এবং পর্যাপ্ত সাফাই সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, গত মার্চে গাজার এক-তৃতীয়াংশ পরিবারের মধ্যে উকুনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগজনক।
এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যদি কোনো নিরস্ত্র জরুরি সহায়তাকর্মীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করা হয়, তা কি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে? জবাবে ফারহান হক বলেন, বিষয়টি যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে, তবে এটি নিয়ে তদন্ত চলমান থাকায় তিনি সরাসরি মন্তব্য করতে চান না। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, মানবিক কর্মীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত একটি ভিডিও নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গত ২৩ মার্চ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী ১৫ জন জরুরি সহায়তাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়েছে এক নিহত প্যারামেডিকের মোবাইল ফোন থেকে, যাকে পরে একটি গণকবরে পাওয়া যায়।