আফ্রিকার ৫৩টি দেশের জন্য আমদানিতে শুল্ক তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। যেসব দেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, কেবল তারাই এই সুবিধা পাবে। বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকান পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে। চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা বিষয়ক এক সাম্প্রতিক বৈঠকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যদিও সিদ্ধান্তটি কার্যকর হওয়ার নির্দিষ্ট দিন এখনো জানায়নি চীন সরকার।
চীন ইতিমধ্যে আফ্রিকার স্বল্পোন্নত ৩৩টি দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক মওকুফ করেছিল। নতুন ঘোষণার ফলে সেই তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার মতো বড় বাণিজ্যিক অংশীদাররাও। ব্যতিক্রম একমাত্র এসোয়াতিনি, যারা তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় চীনের ‘এক চীন নীতি’র পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত।
চীন বর্তমানে আফ্রিকা থেকে বিপুল পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে, যার বড় অংশ আসে কঙ্গো ও গিনি থেকে। ২০২৩ সালে চীনে আফ্রিকার রপ্তানি ছিল প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলারের, যা চীনকে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আফ্রিকার ওপর শুল্ক বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে। গত এপ্রিলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেসোথো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার পণ্যের ওপর যথাক্রমে ৫০, ৩০ ও ১৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যদিও এসব শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে তা কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেসব দেশ আলোচনায় আগ্রহ দেখাবে, তাদের জন্য শুল্ক স্থগিতাদেশ আরও বাড়ানো হতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান আফ্রিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে আফ্রিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের একটি বড় অংশ ‘আফ্রিকা গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট’-এর আওতায় শুল্কমুক্ত থাকে, যা ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়তে পারে।
চীনের এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্যিক লাভ নয়, আফ্রিকায় তাদের প্রভাব আরও বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।