ইরানের উত্তরাঞ্চলের সেমনান এলাকায় ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নিয়ে এখন দেশ-বিদেশে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। তাসনিম সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সেমনান শহর থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং এটি সংঘটিত হয় ১০ কিলোমিটার গভীরতায়। যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ দাবি করছে, এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খুবই সামান্য, তবু ভূমিকম্পকে ঘিরে নানা গুঞ্জন উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই কারণে যে, সেমনান কোনো সাধারণ এলাকা নয়। এখানে অবস্থিত রয়েছে ইরানের অন্যতম সামরিক ও প্রযুক্তিগত ঘাঁটি—সেমনান স্পেস সেন্টার এবং সেমনান মিসাইল কমপ্লেক্স। এখান থেকেই ইরান তার ব্যালিস্টিক মিসাইল ও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে থাকে। মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এটি মিসাইল ও রকেট পরীক্ষার জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। সেমনান থেকেই উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ‘সাফির’ ও ‘সিমোরঘ’ নামের মহাকাশ যান। ফলে এই অঞ্চলে আকস্মিক ভূমিকম্প আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ভূমিকম্প ও পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট ভূকম্পনের মাত্রা ও প্রকৃতি এক নয়। ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষায় ৬.৩ মাত্রার কৃত্রিম ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছিল। সাধারণভাবে ৫ মাত্রার কম্পন হয় যখন আনুমানিক ১০০ কিলোটনের একটি পারমাণবিক বোমা ভূগর্ভে বিস্ফোরিত হয়। আর এবার সেমনানে যে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তা এমন এক জায়গায়, যেখানে ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড ঘনিষ্ঠভাবে পরিচালিত হয়।
ঘটনাটি আরও বেশি সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে কারণ এটি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ নবম দিনে পা রেখেছে এবং উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে। তেহরান ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তারা আর কোনো আলোচনা করবে না। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ শান্তি আলোচনার পথ খোলা রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও, এই ভূমিকম্প বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ঘটনাটি নিছক একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না-ও হতে পারে। এটি হয়তো কোনো গোপন পরীক্ষার ফলাফল, যা ইরান আন্তর্জাতিক নজরদারি এড়িয়ে সম্পন্ন করেছে। বিষয়টি এখন শুধু ভূমিকম্প নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনার অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।