হজ মৌসুমের ঠিক আগে সৌদি আরবে আটক হওয়া ইরানের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা গোলাম রেজা গাসেমিয়ানকে মুক্তি দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। গাসেমিয়ান ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্য এবং দেশটির এক সময়ের জনপ্রিয় ধর্মীয় সংগীতশিল্পীও ছিলেন, যিনি ‘গালিবাফের কোকিল’ নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তার এই গ্রেফতার ও মুক্তি কেবল একটি ধর্মীয় সফরের ঘটনা ছিল না—বরং তা হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের স্পর্শকাতর কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি।
ইরানের দাবি, হজে অংশ নিতে গিয়ে সৌদির মক্কায় অবস্থানকালে গাসেমিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়, যার কারণ হিসেবে একটি অনলাইন ভিডিওকে দায়ী করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে গাসেমিয়ান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সৌদি আরব আবারও ‘উমাইয়া যুগের কারখানায়’ ফিরে যাচ্ছে এবং হজযাত্রীদের ‘উপরিভাগের কূটনীতির’ ফাঁদে না পড়ার আহ্বান জানান। ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে, যা সৌদি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং এরপরই শুরু হয় তার আটকের প্রক্রিয়া।
ঘাসেমিয়ানের আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান। তেহরানে শুরু হয় কূটনৈতিক তৎপরতা। ইরানি কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে একাধিকবার সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়। একাধিক ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে জানায়, এটি সৌদি সরকারের দ্বৈত নীতির বহিঃপ্রকাশ এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতারও প্রমাণ।
এদিকে সৌদি আরব এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং রাজনৈতিক সমালোচনার কারণেই এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ঘাসেমিয়ান শুধু একজন ধর্মীয় বক্তাই নন, বরং ইরানে একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কে সরব অবস্থান নেওয়া একজন প্রভাবশালী কণ্ঠ। বহুবিবাহ, সামাজিক নীতিমালা ও ইসলামি সংস্কৃতির কঠোর ব্যাখ্যা প্রচারে তিনি বরাবরই সক্রিয় ছিলেন।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো, হজের মতো পবিত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও এখন আর কেবল ধর্মীয় থাকে না—বরং তা রাজনৈতিক টানাপড়েনের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সৌজন্য একে অপরের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়।