গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষের মধ্যে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর একেবারে ‘খুব কাছাকাছি’ অবস্থানে রয়েছেন। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, হয়তো খুব শিগগিরই—আজ অথবা আগামীকাল—এই বিষয়ে একটি সুসংবাদ দেওয়া সম্ভব হবে। তাঁর মতে, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হলে তা গাজা পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, গাজার অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের সঙ্গেও এই বিষয়ে পরামর্শ চলছে। আলোচনায় একটি খসড়া চুক্তির প্রস্তাব উঠেছে, যেখানে বলা হয়েছে—২৮ জন ইসরাইলি জিম্মির বিনিময়ে ১,২০০-র বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ৭০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে উভয় পক্ষ।
তবে আলোচনার টেবিলে সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলেও, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলা বন্ধ হয়নি। শুক্রবার দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস, রাফা এবং গাজা সিটিতে একযোগে বিমান ও স্থল হামলা চালায় ইসরাইল। দেইর আল-বালাহতে একটি বাড়িতে হামলায় বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। খান ইউনিসে গোলাবর্ষণে নিহত হয় এক শিশু, আহত হয় তার মা। গাজা সিটিতে বেসামরিক একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় নিহত হন স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ আরও অনেকে।
এই হামলার মধ্যেই পশ্চিম তীরে নতুন করে ৫ হাজার বসতি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। জর্ডান উপত্যকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব বসতি তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার এই ধরনের বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে উদ্বেগ জানালেও নেতানিয়াহুর প্রশাসন তাতে কর্ণপাত করছে না। বরং তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এসব পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে।
এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তি একদিকে যেমন মানবিক স্বস্তির আশা জাগাচ্ছে, অন্যদিকে ইসরাইলের চলমান হামলা ও বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নতুন করে উত্তেজনার শঙ্কা তৈরি করছে। পরিস্থিতি এখন নজিরবিহীন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে—যেখানে শান্তির আলো এক প্রান্তে জ্বলছে, আর অন্য প্রান্তে ধোঁয়া আর আগুন ছড়াচ্ছে সহিংসতা।