কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার চূড়ায় পৌঁছেছে। এই ঘটনার জেরে দুই দেশই একের পর এক কড়া অবস্থান নিচ্ছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও উদ্বেগজনক।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এই হামলার পর জরুরি বৈঠকে বসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে সীমান্ত-পার সন্ত্রাসে পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, কাশ্মীরে নির্বাচনের ঠিক পরপরই এই হামলা ইঙ্গিত দেয় যে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক হামলা, যার পেছনে রয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষিত লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা হিসেবে পরিচিত এবং ধারণা করা হচ্ছে, এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে:
১. ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাসে যুক্ত থাকার অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করা পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে।
২. পাঞ্জাবের সমন্বিত আটারি চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পথে যারা বৈধভাবে চলাচল করেছেন, তাদের ১ মে’র আগে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৩. সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য চালু থাকা ‘বিনা ভিসা প্রকল্পে’ পাকিস্তানের নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাদের ইতোমধ্যে এই ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হয়েছে এবং যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে।
৪. দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত দেশটির সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পরামর্শদাতাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে—অর্থাৎ তারা এখন ভারতে অবাঞ্ছিত। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে। একইভাবে, ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাস থেকেও সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
৫. উভয় দেশের রাজধানীতে অবস্থিত দূতাবাসে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর হবে ১ মে’র মধ্যে।
এদিকে পাকিস্তানও ভারতীয় পদক্ষেপের কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২৪ এপ্রিল করাচি উপকূল থেকে একটি সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল উৎক্ষেপণের নোটিশ জারি করেছে ইসলামাবাদ, যা ২৪ ও ২৫ এপ্রিলের মধ্যে চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই। তবে পাকিস্তান সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এছাড়া, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের ডাকে ২৪ এপ্রিল ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) জরুরি বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এতে সভাপতিত্ব করবেন এবং ভারতের সিদ্ধান্তের পাল্টা জবাব নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
উভয় দেশের এ ধরনের পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নজরে এসেছে। পরিস্থিতি এখন নাজুক এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে—যেখানে কূটনৈতিক তৎপরতা এবং সংযমই পারে নতুন সংঘাত এড়াতে সাহায্য করতে।