বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং শেয়ারবাজারে আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রোববার (১১ মে) রাজধানী ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনাগুলো দেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, পুঁজিবাজারের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ, গতিশীল এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। তার প্রস্তাবিত পাঁচটি নির্দেশনা হলো:
- সরকারের মালিকানা সম্পন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা: সরকার যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মালিক, তাদের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে।
- বেসরকারি বড় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা: বেসরকারি খাতের বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে প্রণোদনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।
- পুঁজিবাজার সংস্কারে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে পুঁজিবাজারে সংস্কার করতে হবে। তিনি তিন মাসের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপর জোর দেন।
- অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ পরিবেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
- ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমানো: বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড এবং ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহিত করতে হবে। এটি বাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, গত কয়েক দশকে যারা শেয়ারবাজারের লুটপাটে জড়িত ছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তিনি শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থাকে ‘অকল্পনীয়’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এর উত্তরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “শেয়ারবাজারকে এমন একটি পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে হবে, যাতে এটি আর লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলেই বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং এটি সবার জন্য লাভজনক হবে।”
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
প্রধান উপদেষ্টার এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নতি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।