বাংলাদেশের নির্মিত একটি নতুন বাঁধকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মুহুরি নদীর তীরে বাংলাদেশ অংশে তৈরি এই বাঁধ ঘিরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন। বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে রোববার বিলোনিয়া সীমান্ত শহর পরিদর্শন করেছে ভারত সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগের সচিব কিরণ গিট্টে। তিনি বিলোনিয়া শহরসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বৈঠকে বিলোনিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যানসহ একাধিক স্থানীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
কিরণ গিট্টে পরিদর্শন শেষে জানান, বাংলাদেশের নির্মিত এই নতুন বাঁধের কারণে বর্ষাকালে পানি জমে ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতা বা বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে—এমন শঙ্কা থেকে ভারত সরকার নিজেও প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণে হাত দিয়েছে। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনিয়া ও আশপাশের এলাকাকে নিরাপদ রাখতে মেরামত ও নির্মাণকাজ দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চালিয়ে আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ ত্রিপুরায় কাজের পরিধি বড় হওয়ায় অতিরিক্ত পাঁচজন প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যাতে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগোয়। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে মুহুরি নদীর পাড় ঘেঁষা বহু বাঁধ ও অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকার ইতোমধ্যে ৪৩টি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করেছে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত।
পরিদর্শনের সময় সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, মুহুরি নদীর বিপরীতে বাংলাদেশের তৈরি নতুন এই বৃহৎ বাঁধটি নিয়ে সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বিলোনিয়া পৌর এলাকা, বল্লামুখ ও ঈশান চন্দ্রনগরের বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, বর্ষাকালে নদীর পানি বাড়লে এই বাঁধের কারণে পানি ফিরে গিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্লাবন সৃষ্টি হতে পারে।
এটি কোনো একক ঘটনা নয়। এর আগেও উত্তর ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একই ধরনের বাঁধ নির্মাণের ফলে বর্ষা মৌসুমে কৈলাশহর শহরসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্লাবনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এইসব অভিজ্ঞতার আলোকে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে বাঁধ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে প্রশাসন।
বাংলাদেশের নতুন বাঁধের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও প্রকৌশল কাঠামো নিয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও, উভয় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের জন্য এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।