আকাশে এক ঝাঁক পাখি উড়ছে—দেখে মনে হবে প্রকৃতির সাধারণ এক দৃশ্য। কিন্তু একটু ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে, এগুলো আসল পাখি নয়, বরং অত্যাধুনিক নজরদারি যন্ত্র। চীনে তৈরি এমনই এক প্রযুক্তি এখন গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পাখির আকৃতিতে তৈরি এই ড্রোনগুলো নিঃশব্দে উড়ে বেড়ায়, তথ্য সংগ্রহ করে, এমনকি হামলাও চালাতে পারে।
চীনের এই ‘পাখি ড্রোন’ প্রযুক্তিতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। ম্যাগপাই আকৃতির ছোট ড্রোন থেকে শুরু করে বিশাল ঈগল-আকৃতির সশস্ত্র ড্রোন—সবই এখন প্রস্তুত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। ডানার নড়াচড়াও এমনভাবে তৈরি, যা দেখলে স্বাভাবিক চোখে তা পাখি বলেই মনে হবে। নেই কোনো শব্দ, রাডারে ধরা পড়ে না, এমনকি চলাফেরায় রয়েছে নিখুঁত শৃঙ্খলা।
এই ড্রোনগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নত ক্যামেরা, সেন্সর ও কখনো কখনো বিস্ফোরক। ছোট ড্রোনগুলো শহরের অলিগলিতে নজরদারি চালায়, আর বড়গুলো মিসাইল বহন করে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। একটি ঈগল-আকৃতির ড্রোন টানা ৪০ মিনিট আকাশে থাকতে পারে এবং ৮ কিমি পর্যন্ত যেতে সক্ষম। হামিংবার্ড নামে একটি ভারী ড্রোন ৭ কেজি ওজনের বিস্ফোরক নিয়ে আক্রমণ করতে পারে।
শুধু নজরদারি নয়, এগুলো এখন আধা-স্বয়ংক্রিয় আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে সাধারণ যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে এগুলো হয়ে উঠেছে কার্যকর সমাধান। এমনকি জিপিএস সিগনাল না থাকলেও কাজ চালিয়ে যেতে পারে এই ড্রোনগুলো।
এতসব সুবিধার মধ্যেও উঠছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—নিরাপত্তা ও নৈতিকতার। সাধারণ মানুষ জানতেই পারছে না, তারা কখন কোন ড্রোনের নজরদারিতে আছে। দেখতে নিরীহ পাখি হলেও এগুলো যে আসলে যুদ্ধের হাতিয়ার—তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক আইন এখনো এসব প্রযুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। যদি এমন ড্রোন অপরাধীদের হাতে পড়ে, তাহলে বিপদ আরও বাড়বে।
চীন এসব ড্রোন শনাক্তে ‘কে-২৫’ নামের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও তৈরি করছে, যা ২০০ মিটার দূর থেকেও ড্রোন শনাক্ত করে ধ্বংস করতে সক্ষম। কিন্তু পাখির মতো দেখতে ড্রোন শনাক্ত করাই এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
এই প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধের ধরনই বদলে দিচ্ছে না, বদলে দিচ্ছে যুদ্ধের নৈতিকতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভাবনাও। পাখির মতো নিরীহ কিছু এখন হয়ে উঠেছে ভয়ংকর অস্ত্র। তাই শুধু প্রযুক্তি নয়, এই বিষয়টিকে মানবাধিকার, আইন এবং নৈতিকতার আলোতেও মূল্যায়ন করা জরুরি।