তাইওয়ান চলতি মাসের শেষ দিকে নিজেদের তৈরি একটি আত্মঘাতী সমুদ্র ড্রোনের (ইউনম্যানড সারফেস ভেহিকল – ইউএসভি) যুদ্ধক্ষমতা পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদারে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাইওয়ান সরকার। প্রকল্পটি ‘কুয়াই চি’ নামে পরিচিত এবং এটি পরিচালনা করছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল চুং-শান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসআইএসটি)।
প্রথম ধাপের যুদ্ধ-সক্ষমতা মূল্যায়ন শুরু হবে জুনেই, আর বছরের শেষ নাগাদ আরও উন্নত পরীক্ষা চালানো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগস্টে দক্ষিণ তাইওয়ানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ায় এই আত্মঘাতী ড্রোনের সরাসরি ব্যবহার করা হবে। এর জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করেছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন নিউ তাইওয়ান ডলার (২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ড্রোনের নির্মাণ করছে লুংতেহ শিপবিল্ডিং কোম্পানি, যাদের তিনটি আক্রমণাত্মক এবং একটি লক্ষ্যবস্তু ইউএসভি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই নৌযানগুলোর প্রতিটি থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ও লক্ষ্য শনাক্তকরণ প্রযুক্তিসম্পন্ন। এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রুপক্ষের জাহাজ শনাক্ত করে আঘাত হানতে সক্ষম হবে। সামরিক সূত্র জানায়, বর্তমান পরিকল্পনায় তাইওয়ান সেনাবাহিনী ২০০টিরও বেশি এই ধরনের ড্রোন সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রকল্প-সংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, আক্রমণাত্মক ড্রোন নৌকার দৈর্ঘ্য হবে ১০ মিটারের কম, ওজন চার টনের নিচে এবং পানিতে নিমজ্জনের গভীরতা ০.৫ মিটারের নিচে। অন্যদিকে, লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহৃত ইউএসভির দৈর্ঘ্য ১৭ মিটারের নিচে ও ওজন প্রায় ২০ টন হবে।
এছাড়া, এনসিএসআইএসটি আগামী ১৭–১৮ জুন ইয়িলান কাউন্টির সু’আও উপকূলে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। এতে সাতটি তাইওয়ানি ও পাঁচটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এখানে থাকবে ইউএসভি প্রযুক্তির বাস্তব প্রদর্শনী, যার মধ্যে রয়েছে আক্রমণ, টহল, উদ্ধার, রসদ পরিবহন এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা। তবে গোপন কুয়াই চি নৌকা এবং এনডেভার মান্টা প্রদর্শনীতে থাকছে না, কারণ এটি এখনো গোপনীয় পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এনসিএসআইএসটি জানিয়েছে, শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ও দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিগুলোই সেখানে দেখানো হবে।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো লাইভ ডেমোর মাধ্যমে ইলেকট্রো-অপটিকাল ইমেজিং, গতিশীলতা, দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ, সমুদ্র অভিযোজন ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা উপস্থাপন করবে।
এনসিএসআইএসটি আশা করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে পরীক্ষাগুলো শেষ করে ২০২৬ সাল থেকে এই ড্রোনের বড় আকারে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প সফল হলে এটি তাইওয়ানের ‘অসমমিত প্রতিরক্ষা কৌশল’-এর অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হবে।
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে একত্রীকরণের হুমকি দিয়ে আসছে। যদিও অধিকাংশ দেশ—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ—তাইওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, কিন্তু তাইপের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন বরাবরই বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করে এবং তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার জন্য সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।