ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে দেশটির মূল্যবান খনিজ সম্পদের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার বিনিময়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেলেনস্কি এই চুক্তিকে “নৈতিকভাবে ভ্রান্ত” এবং “নব্য উপনিবেশবাদী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
“আমাদের দেশ দখলের জন্য যুদ্ধ করছে রাশিয়া, আর এখন আমাদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য অন্য দেশ চুক্তির প্রস্তাব দিচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে,
“আমাদের রক্ষার জন্য যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা ফেরত দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। ট্রাম্প যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কথা বলেছেন, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা এর এক-পঞ্চমাংশেরও কম।”
জেলেনস্কির মতে, এই চুক্তি শুধুমাত্র যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে নিজের সেনা মোতায়েন করে এবং সরাসরি প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা দেয়।
🔥 ইউক্রেন ও ন্যাটো: ভবিষ্যৎ কী?
যদিও জেলেনস্কি ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার শর্তে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবুও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই লক্ষ্য অর্জনকে কঠিন করে তুলছে।
- ন্যাটো দেশগুলো এখনো ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
- রাশিয়ার সাথে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেওয়া হলে তা মহাযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ইউক্রেনের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, কারণ ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী এবং ইউক্রেন ইস্যুতে তাঁর মনোভাব পরিবর্তনশীল।
🇷🇺 ট্রাম্পের অবস্থান: রাশিয়াকে দোষী মানতে নারাজ?
ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন যে,
“এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে সরাসরি দোষারোপ করা যাবে না।”

তিনি আরও বলেন,
“ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের পরিকল্পনা রাশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা যুদ্ধের অন্যতম কারণ।”
এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছে, যা ইউক্রেনের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
💬 ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সম্পর্কের অবনতি
সম্প্রতি ট্রাম্প জেলেনস্কিকে “একনায়ক” বলে অভিহিত করেছেন, যা দুই নেতার সম্পর্ককে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলেনস্কির সরকার যুদ্ধের কারণে নির্বাচন স্থগিত রেখেছে, কিন্তু ট্রাম্প চাইছেন ইউক্রেন অবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন করুক।
কিন্তু যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, পুতিনকেও কি তিনি “একনায়ক” বলে মনে করেন?
তখন তিনি কৌশলে উত্তর এড়িয়ে যান।
🔎 ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ: কী হতে পারে?
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে,
- ইউক্রেন যদি ন্যাটো সদস্যপদ না পায়, তবে দেশটির দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
- ট্রাম্প প্রশাসন যদি ইউক্রেনকে সমর্থন কমিয়ে দেয়, তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং রাশিয়া আরও আগ্রাসী হতে পারে।
- ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কারণ জেলেনস্কি পদত্যাগের ইঙ্গিত দিলেও, বাস্তবে এটি কতটা সম্ভব হবে, তা বলা মুশকিল।
বিশ্লেষকদের মতে, জেলেনস্কির পদত্যাগের প্রস্তাব একটি কৌশলগত চাল হতে পারে, যা ন্যাটো দেশগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য দেওয়া হয়েছে।
তবে ইউক্রেনের জন্য আসল চ্যালেঞ্জ হলো,
- ন্যাটোতে সদস্যপদ লাভ করা
- যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসনের সমর্থন নিশ্চিত করা
- রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা চালিয়ে যাওয়া
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।