কাবুল, ২৫ ফেব্রুয়ারি: আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ব্রিটিশ নাগরিক এক দম্পতিকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। আটককৃত এই দম্পতির বয়স ৭০-এর ঘরে এবং তারা বেশ কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানে বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
🛑 তালেবানের হাতে আটক ব্রিটিশ দম্পতি
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বৃদ্ধ এই ব্রিটিশ দম্পতিকে কাবুল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে তারা আফগানিস্তানে শিক্ষা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে:
- তালেবান গোয়েন্দা সংস্থা “জেনারেল ডিরেক্টরেট অব ইন্টেলিজেন্স (GDI)” এই গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে।
- তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তবে গোয়েন্দা কার্যক্রম বা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
- তাদের আটক রাখার অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
🇬🇧 যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
বৃটিশ সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (FCDO) জানিয়েছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন:
“আমরা আফগানিস্তানে আমাদের দুই নাগরিককে আটকের ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।”
⚖️ তালেবানের গ্রেপ্তার অভিযানের কারণ কী?
তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের উপর কড়া নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা বিদেশিদের গোয়েন্দাবৃত্তি, ধর্মীয় প্রভাব বিস্তার, অথবা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আটক করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান সরকারের কঠোর ইসলামিক আইন ও বিদেশি সংস্থাগুলোর প্রতি সন্দেহমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই ধরনের গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়ে থাকতে পারে।
কিছু সম্ভাব্য কারণ হতে পারে:
- গোপন গোয়েন্দা তৎপরতার অভিযোগ – তালেবান প্রায়ই বিদেশি নাগরিকদের সন্দেহ করে থাকে, বিশেষ করে যারা এনজিও বা মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত।
- আফগানিস্তানে ইসলামী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ – তালেবান শাসনের অধীনে কট্টর শরিয়া আইন বলবৎ রয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েন – তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব রয়েছে, এবং তারা অনেক সময় বিদেশি নাগরিকদের আটক করে কূটনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে।
🛃 আফগানিস্তানে বিদেশিদের নিরাপত্তা ঝুঁকি
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার অবনতি ঘটেছে।
- এর আগে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
- বেশ কয়েকজন বিদেশিকে অতীতে তালেবান সরকার আটক করেছিল, পরে কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
- বিশেষ করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং বিদেশি সংস্থার কর্মীরা তালেবানের কঠোর নজরদারির আওতায় থাকেন।
🔍 অতীতে তালেবানের হাতে বিদেশি নাগরিক আটক হওয়ার ঘটনা
এটি প্রথমবার নয় যে, তালেবান কর্তৃক বিদেশি নাগরিকদের আটক করা হলো। অতীতে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য:
- ২০২২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী “কেভিন কর্কো” কাবুল থেকে আটক হন এবং কয়েক মাস পর মুক্তি পান।
- ২০২৩ সালে জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা আটক হয়েছিলেন, যদিও কূটনৈতিক আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
- একাধিক মার্কিন নাগরিক ও ইউরোপীয় নাগরিককেও সন্দেহজনক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
🆘 মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবানের এই ধরনের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছে।
সংস্থাগুলোর মতে:
- তালেবান সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে বিদেশি নাগরিকদের আটক করছে।
- আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে প্রভাবিত করতে তারা এই ধরনের গ্রেপ্তার ব্যবহার করছে।
- আফগানিস্তানে কাজ করা মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে:
“এই ধরনের গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তালেবান সরকারের উচিত অবিলম্বে আটককৃত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া এবং বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
🔮 ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে পারে। ব্রিটিশ সরকার তাদের নাগরিকদের দ্রুত মুক্তির জন্য তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে:
- যুক্তরাজ্য তালেবানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিতে পারে।
- এই ঘটনার কারণে আফগানিস্তানে পশ্চিমা সাহায্য কমে যেতে পারে।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নীতির দাবি তুলতে পারে।
এই ঘটনাটি আফগানিস্তানে বিদেশি নাগরিকদের জন্য এক নতুন সতর্কবার্তা। তালেবান শাসনের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিদেশি নাগরিকদের আটকের ঘটনা আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বজুড়ে এখন নজর রয়েছে তালেবান সরকারের ওপর—তারা এই ব্রিটিশ দম্পতিকে কীভাবে পরিচালনা করে এবং কত দ্রুত তাদের মুক্তি দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।