কিয়েভ, ইউক্রেন – ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার বিমান ও ড্রোন হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডোনেৎস্ক, খারকিভ ও খেরসন অঞ্চলে এই হামলাগুলো চালানো হয়, যেখানে আবাসিক ও শিল্প এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডোনেৎস্ক: সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি
ডোনেৎস্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান ভাদিম ফিলাশকিন।
- দোব্রোপিলিয়া শহরে একটি আবাসিক ভবনের কাছে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে, যেখানে ১১ জন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে পাঁচজন শিশু।
- এই অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে আরও ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খারকিভ: ড্রোন হামলায় হতাহত
খারকিভে রুশ ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
- বগোদুখোভ শহরের একটি শিল্প এলাকায় বিস্ফোরণের ফলে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
- হামলার পর ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, রাশিয়ার শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়।
খেরসন: বেসামরিক গাড়িতে হামলা
খেরসনে একটি বেসামরিক গাড়িতে ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়, বলেছেন আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার প্রকুদিন।
ভিডিও বিশ্লেষণে হামলার প্রমাণ
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনটি হামলার সুনির্দিষ্ট স্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
- দোব্রোপিলিয়ার ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের সময় অ্যাম্বুলেন্স দল উপস্থিত ছিল, যা ইঙ্গিত করে প্রথম হামলার পরপরই দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়।
- কোস্তিয়ানতিনিভকার আবাসিক এলাকায় হামলার পর ধারণ করা ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছে যে, এই এলাকাটিও রুশ হামলার শিকার হয়েছে।
- বগোদুখোভে হামলার পর বিশাল অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য ধরা পড়েছে ভিডিওতে।
যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া এখন আরও আক্রমণাত্মক কৌশল নিচ্ছে, বিশেষ করে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
- ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
- ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আরও সামরিক সহায়তার আবেদন করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনকে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
রাশিয়া দাবি করেছে যে, তারা শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে, তবে বাস্তবে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া হামলা আরও বাড়াতে পারে, কারণ তারা ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো, সামরিক ঘাঁটি ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়।
এদিকে, নাটো (NATO) জোট ইউক্রেনকে আরও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে।
যুদ্ধের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
এই হামলাগুলো ইউক্রেনে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেবে, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা এখনও অনিশ্চিত, তবে রাশিয়ার এই হামলাগুলো যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।